ব্যাংক খাতে বর্তমানে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্রমবর্ধমান বা ঊর্ধ্বগতি খেলাপি ঋণের অঙ্কে লাগাম টানা। অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়া খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান মুদ্রানীতিতে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে একটি কর্মকৌশল বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, যা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে নতুন ঋণ যাতে খেলাপি না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে কঠোর তদারকি করা এবং বর্তমান খেলাপি ঋণ থেকে একপক্ষে ১ শতাংশ নগদ আদায় নিশ্চিত করতে হবে। মন্দ হিসাবে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ ২ বছরের মধ্যেই অবলোপন করা যাবে। বুধবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অনুপাত ২০২১ সালের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে তা ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুনের পর এ হার সামন্য কমেছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড হয়েছে গত মার্চে। ওই মাসে খেলাপি ঋণ ডিসেম্বরের তুলনায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান মুদ্রানীতিতে ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণীত কর্মকৌশলের অধীনে ঋণ অবলোপনের সময় তিন বছর থেকে কমিয়ে দুবছর করা হয়েছে। ফলে অবলোপনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সম্প্রতি বাজারভিত্তিক সুদের হার প্রবর্তন করায় এর হার বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদানের সম্ভাব্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে বা যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে পারবে, যা ভবিষ্যতে নতুন ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে বাজারভিত্তিক সুদের হার চালু করায় প্রাথমিকভাবে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামগ্রিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চাপকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া বাজারভিত্তিক সুদের হারের পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার মান ব্যাপকভাবে কমানোর ফলে আমদানি আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে ওঠবে। ফলে আমদানি ব্যয় কমবে, যা আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। রমজানে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে সার্বিকভাবে এ হার বেড়েছে। মূলত বর্ধিত পরিবহণ ব্যয় ও অভ্যন্তরীণ বাজারমূল্য বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে।