ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলছে না। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ প্রথম শ্রেনীর পৌরবাসী। মশক নিধনে গত এক বছরে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি পৌর কতৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর থেকে সরকারি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোটেলগুলোসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাসা বাড়িতে বসার উপায় থাকে না। মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মশার উপদ্রবে একদিকে কোন কাজ করা যায় না এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে পৌরসভা ধারাবাহিকভাবে তাদের মশকনিধন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এতে পৌরবাসির মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে । জানা গেছে, রামগঞ্জ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেনীর একটি পৌরসভা। এটি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। পৌরকার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ন এই শহরের প্রায় সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা ও প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঝোপঝাড়পূর্ণ হয়ে আছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার না করা এবং পৌর সভার বিভিন্ন জাগায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ থাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া পৌর শহরে বিভিন্ন স্থানে ঝোপঝাড়পূর্ণ থাকায় ও নিয়মিত মশা নিধনে কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার না করায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার নাগরিকদের। সরেজমিনে গতকাল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রামগঞ্জ পৌর এলাকায় অধিকাংশ মহল্লাতেই ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট ডোবা-নালা। শহরের মধ্যে অধিকাংশ ড্রেনে পানিপ্রবাহ নেই। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে গেছে ড্রেনগুলো। সময়মতো রাস্তাঘাট ও খোলা জায়গা থেকে ময়লা তুলে না নেওয়ায় বাড়ছে মশার উৎপাত। শহরের অধিকাংশ সড়কের পাশের ড্রেন ও নালার ময়লা তুলে সড়কে রাখায় পুরো শহর উন্মুক্ত ভাগাড়ের শহর মনে হচ্ছে।
এসব ড্রেন মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ঘরে মশার উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও মশা কমছে না। কিন্তু এবার মশার উপদ্রব যেন খুব বেশি। মশার কামড়ে সন্ধ্যা থেকেই অতিষ্ঠ হতে হয়। কয়েল, ধোঁয়া কিছু দিয়েই কিছু হচ্ছে না। মশার উপদ্রবে রাতে কাজকর্ম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিকেল থেকে দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও নিস্তার মিলছে না। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন অভিভাবকেরা। রান্নাঘর থেকে শুরু করে অফিস-আদালত এমনকি বাস, সিএনজি, অটোরিক্স্রা থেকে মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পান না নাগরিকরা। মশারি, কয়েল ও ম্যাজিক ব্যাট ব্যবহার করেও কাজ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে নাগরিকদের।
পৌরসভার ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, কোন কোন এলাকায় ডাস্টবিন নেই। রাস্তার ধারে ফেলতে হয় ময়লা-আবর্জনা। ড্রেনগুলোতে পানির প্রবাহ নেই। দীর্ঘদিন জমে থাকা পানিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, তাতে দুর্গন্ধের সঙ্গে বাড়ছে মশাও। গত কয়েক মাস থেকে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। তারা পৌরসভার কোনো মশকনিধন কার্যক্রম দেখেননি। মশার যন্ত্রণায় পৌরসভা ও এর আশপাশ এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিনরাতে সমানতালে মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কিন্তু বেসামাল পরিস্থিতিতে মশা নিধনে নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ।
এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। বন্ধ ড্রেন পরিষ্কার না করায় সৃষ্ট পানিবদ্ধতা মশা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন পৌর বাসিন্দারা। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে মশার প্রজনন। মশার কামড়ে মানুষই নয়, গৃহপালিত পশু অস্বস্তিতে রয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী এমনকি মসজিদের মুসল্লিরা মশার কষ্টে আছেন। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ড্রেন-নর্দমায় পানি জমে তা মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।
এতে করে মশাবাহিত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া আছে অপরিচ্ছন্ন জলাশয় ও লেক। সব মিলিয়ে পৌর এলাকার পাড়া-মহল্লা ও অলি-গলিতে মশার বংশ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে, যা পৌরবাসীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌর স্যানেটারি ইনস্পেক্টর আলমগীর হোসেনের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, মোশক নিধন কার্যক্রম পৌরসভার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এরই অংশ হিসেবে অচিরেই ঔষধ ছিটিয়ে মশক নিধন করা হবে।