আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার বিএ পাশ সনদ জাল বলে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান।
জাল সনদের বিষয়ে তদন্ত করতে ইউএনও আব্দুল্লাহ বিন রশিদ তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হক মিলন প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এতে কলেজের শিক্ষকদের চার মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা মানবেতন জীবনযাপন করছেন।
দ্রুত বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। জানা গেছে, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯ সালে বিএ (পাস) জাল সনদ দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হন।
অধ্যক্ষ হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারির অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সাময়িক বরখাস্তের পর তার ডিগ্রি পাশের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তিনি স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৩ সালে তার বিএ পাশের জাল সনদের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালতে ফোরকান মিয়া তার আমতলী কলেজের ডিগ্রি পাশের সনদ অস্বীকার করে প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি পাশের সনদ আদালতে দাখিল করেন। এ মামলায় তিনি ১৮ দিন জেল হাজতবাস করেন। ওই সনদটি জাল বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রত্যয়ন দেন। গত ৮ বছর ফোরকান কলেজে দায়িত্ব থেকে দূরে ছিলেন। গত বছর ১২ জুলাই মো. ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসেন।
এদিকে গত ১২ জুলাই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার বিএ পাশের সনদ জাল মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই আবদেনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ইউএনও মো. আব্দুল্লাহ বিন রশিদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হক মিলনকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার জাল সনদের প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্ত কর্মকতা জিয়উল হক মিলন।
কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার বিএ পাশ সনদ জাল। তার সনদ যাচাই করে বেতন-ভাতা বন্ধে ইউএনও মো. আব্দুল্লাহ বিন রশিদের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু চার মাসেও সনদ জাল তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়ায় চার মাস ধরে কলেজের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দ্রুত সিনিয়র শিক্ষকের স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তদন্ত কমিটির আহবায়ক আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হক মিলন অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়ার জাল সনদের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।