যশোর জেলার শার্শা উপজেলার অন্তর্গত ‘বেনাপোল’ বাংলাদেশের একটি প্রথমসারির পৌরশহর। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় এর অবস্থান।
বাংলাদেশের বিখ্যাত এই স্থলবন্দরটি নানান কারণে আলোচিত। সমালোচিতও কম নয়। সমালোচনার মূল কারণ মাদক। বেনাপোলকে মাদকের স্বর্গরাজ্য বললে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না।
সেই শহরেই অন্যরকম এক মাদকতায় বেড়ে উঠেছেন জাহিদ হোসেন। ফুটবলকে ভালোবেসে, ফুটবলকে ধ্যানজ্ঞান মেনে আজ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সুপ্রতিষ্ঠিত ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের একজন তরুণ, মেধাবী, সম্ভাবনাময়, প্রতিভাবান ফুটবলার। খুব অল্পদিনেই নিজেকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছেন। জাহিদের ফুটবলীয় মেধা-প্রজ্ঞা, পারফরম্যান্সের রোশনাই ক্লাব পাড়ায় ছড়িয়েছে দ্রুতই। তাই তো তাকে দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান থেকে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে বসুন্ধরা কিংস। সদ্য শেষ হওয়া ২০২২-২৩ মৌসুমে মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছিলেন এ ডিফেন্ডার। ১৪ বছর পর মোহামেডান যে ফেডারেশন কাপ জিতেছে সেই জয়ের অন্যতম কারিগর জাহিদ।
‘একদিন দেশের সেরা ক্লাবে খেলবেন’- এমন স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঢাকায় পা রেখেছিলেন জাহিদ। মোহামেডানের জার্সি গায়ে জড়ানোর মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্ন গত বছরই পূরণ হয়েছে তার। সাদা-কালোতে থাকা অবস্থায় আবারো স্বপ্নের জাল বোনা শুরু। এরপর স্বপ্ন দেখেছেন দেশের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে খেলার। সেই স্বপ্নটাও পূরণ করতে পেরেছেন। আসন্ন ২০২৩-২৪ মৌসুমের জন্য কিংসের ডেরায় যাচ্ছেন তিনি।
আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি জাহিদকে! অনেক কষ্ট, পরিশ্রম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সমালোচনা আর প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে তবেই সফলতার মুখ দেখেছেন। আর তাকে এগিয়ে নিতে দুজন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। যা তিনি অকপটে এবং কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণে রেখেছেন। জাহিদের জীবনে সেই প্রিয় দুই ব্যক্তি হলেন আশরাফুল আলম লিটন এবং সাব্বির আহমেদ পলাশ। দুজনই বাংলাদেশের পরিচিতমুখ। লিটন এবং পলাশ আপন আলোয় আলোকিত।
বেনাপোল পৌরশহরের মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ক্লাব আলহাজ্ব নূর ইসলাম ফুটবল একাডেমি থেকেই আজকের জাহিদের সৃষ্টি। দীর্ঘ ৭/৮ বছর এই একাডেমিতে ফুটবল খেলেছেন তিনি। ফুটবলের যত অ আ ক খ- এখানেই শিখেছেন। জাহিদকে হাতে-কলমে শেখানোর কাজটি করেছেন সকলের পছন্দের মানুষ জাহিদের প্রিয় গুরু (কোচ) সাব্বির আহমেদ পলাশ। যশোর থেকে অনেক ফুটবলার আজ ঢাকাতে খেলছেন। তাদের শিক্ষাগুরু হলেন এই পলাশ।
সাধারণ পরিবারের ছেলে জাহিদ। বাবা ট্রাক ড্রাইভার, মা গৃহিনী। এলাকার মানুষ প্রথমে জাহিদকে ফুটবলার হওয়ার জন্য কোনোভাবে উৎসাহ দেননি। বরং ড্রাইভারের ছেলে ফুটবল খেলে উচ্ছন্নে যাবে এ নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিলেন। বরং তারা চাইতেন জাহিদ পড়াশুনা করে বাবার কষ্ট লাঘব করুন। কিন্তু বিধাতা তো জাহিদের ভাগ্যে অন্য কিছু লিখে রেখেছেন। তাই তো সব বাধা পেরিয়ে আজ নিজের জন্য এক অন্যরকম অবস্থান তৈরি করেছেন। জাহিদের বাবা ড্রাইভার হলেও ছেলেকে ফুটবল খেলায় কখনো নিরুৎসাহিত করেননি। পরিবার থেকে সব সময়ই সমর্থন পেয়েছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশুনাটাও চালিয়েছেন সমানতালে।
মেধাবী ডিফেন্ডার জাহিদ মাত্র ৫/৬ বছরেই নিজেকে সেরার কাতরে নিয়ে এসেছেন। ২০১৭ সালে আলহাজ্ব নূর ইসলাম ফুটবল একাডেমির হয়ে পাইওনিয়ার লিগ খেলার পর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে খেলেছেন ফরাশগঞ্জের জার্সিতে। এরপর করোনা এবং পারিবারিক কিছু কারণে ফুটবলে কিছুটা ছেদ পড়লেও ২০২১-২২ মৌসুমে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে খেলে পরের মৌসুমে চলে আসেন মোহামেডানে। সেখান থেকে আজ বসুন্ধরা কিংসের অংশ জাহিদ।
বসুন্ধরা কিংসে অনেক নামি-দামি ফুটবলারের মেলা। তারকায় ঠাসা দল। এমন দলে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন তো জাহিদ। এমন প্রশ্ন শুনে এ ডিফেন্ডার বলেন, ‘জীবনে অনেক কঠিন দিন পার করেছি। কখনো দমে যাইনি। আমি জানি কিংসে অনেক বড়মাপের খেলোয়াড়রা আছেন, বড় ভাইয়েরা আছেন। তারা সবাই আমার শ্রদ্ধাভাজন। তবে আমি পরিশ্রমী। আত্মবিশ্বাস আছে ভালো খেলে কিংসে নিজের জন্য জায়গা করে নিতে পারবই। ’