জামালপুর: বাংলানিউজের সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রায় এক মাস হতে চলল। এখনো হত্যাকারী চেয়ারম্যানপুত্র রিফাতসহ এজাহার ভুক্ত ১৭ আসামি ঘরা ছোঁয়ার বাইরে।
নাদিম হত্যাকাণ্ডের ২৫ দিনের মাথায় শুক্রবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে একটি পোস্ট করেন জান্নাত। লেখেন- ‘আব্বুর সব হত্যাকারীদের আইনে হেফাজতে দ্রুত আনুন। নাহলে আমরণ অনশনে নামবো। কে কে সাথে আছেন?’
পরে বিষয়টি স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে ফোন দিলে জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, আমার আব্বুর হত্যাকারী এজাহারভুক্ত আসামি মাত্র ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান বাবুও গ্রেপ্তার আছে। কিন্তু তার ছেলে রিফাত আমার বাবাকে ইট দিয়ে মেরেছে। তাকে এখনো কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারল না? সেই সাথে আরও আসামি আছেন যারা আমার বাবাকে হত্যার সময় উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকেও এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি ব্যর্থ? নাকি তারা ইচ্ছা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না?
তিনি আরও বলেন, আমার বাবাকে যেভাবে মেরেছে তার বিচার চাইছি অনেক দিন থেকেই। তবে মুল হোতারা গ্রেপ্তার হয়নি। এছাড়া আমাদের সাথে যারা বিচার চাইছে আমার বাবার, তাদেরকেও বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে আসামিদের পরিবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই, তাহলে আসামিরা গ্রেপ্তার হবে কি করে? আমি চিন্তা করছি আসামি রিফাত কি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে? তবে সে কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না? আমি বাধ্য হয়েই এই ঘোষণা ফেসবুকের মাধ্যমে দিয়েছি; আমার আর উপায় নেই। অনশন করবো বাবার হত্যার ঘটনায় আসামিরা যদি গ্রেপ্তার না করা হয়।
এদিকে নাদিম হত্যার ঘটনায় জড়িত নতুন একজনের নাম আসছে বারবার। কারণ, হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত করা বেশিরভাগ আসামিই তাতীলীগের নেতাকর্মী। আর এই তাতীলীগের নেতাকর্মী ও চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদারের অনুসারী।
বকশিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, নাদিম হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৫ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি আসামিদের হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, তাতীলীগের নেতাকর্মী ও চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। প্রথমে তাকে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে ও পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মৃত্যু হয় নাদিমের।
এ ঘটনায় নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে নামীয় ২২ জন ও অজ্ঞাত নামা আরও ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে বাবু চেয়ারম্যানসহ ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে নেওয়া হয়। ১৪ জনের মধ্যে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু, মনিরুজ্জামান মনির ও রেজাউল হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পাঁচ গ্রেপ্তার রয়েছে।