ভোক্তা অধিকারঃ ভোক্তা অধিকার হলো বাংলাদেশে একটি নতুন বিষয়। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকই ভোক্তা। এমনকি যে শিশুটি মায়ের গর্ভে এখন আছে, সেই শিশুটিও একজন সম্মানিত ভোক্তা। সুতরাং মায়ের গর্ভের শিশুটিসহ আমাদের দেশের ভোক্তার সংখ্যা জনসংখ্যারও বেশি। ভোক্তা অধিকার বলতে আমরা সাধারণত বুঝিঃ- কোন ভোক্তা কোন সেবা বা কোন পণ্য বা জিনিস ক্রয় করার সময় প্রতারিত হলে তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়।
সুতরাং ভোক্তা হিসেবে যেসব অধিকার পাওয়া যায়, সে অধিকারগুলি হল ভোক্তা অধিকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একজন ব্যবসায়ী নিজেও ভোক্তা ,কারণ তিনি নিজেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা ক্রয় করে থাকেন। ভোক্তা অধিকার আইন ও ভোক্তার অধিকার বলতে আমরা জানিঃ- ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ পাস করেন। এই আইনটি দ্বারাই আমাদের দেশে ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে ভোক্তার অধিকারগুলো নিম্নে উল্লেখ্য যে:- ১.ধার্যকৃত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্য কোন ব্যবসায়ী ভোক্তার নিকট থেকে নিতে পারবেন না। ২. মোড়কজাত বা প্যাকেটজাত পণ্যে প্যাকেট জাতকরণের তারিখ, উৎপাদনের তারিখ, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ,মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি লিখা থাকতে হবে। ৩.প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। ৪.অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে না।
৫.মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করা যাবে না। ৬.নকল ঔষধ বিক্রি বা উৎপাদন করা যাবে না। ৭.দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে। ৮.মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতাকে প্রভাবিত করা যাবে না। ৯. মানুষের জীবনহানি বা স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় হয় এমন কাজ করা যাবে না। ভোক্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলোঃ- একজন ভোক্তা হিসেবে প্রত্যেকটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। ভোক্তা কোন কিছু ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখে ,শুনে, বুঝে ক্রয় করবেন। এভাবে পণ্য ক্রয় করার পরেও ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা বা অভিযোগ করা যায়। ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা বা অভিযোগ করার নিয়ম হলোঃ- রাষ্ট্র একজন ভোক্তার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছে। এ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা উপ-পরিচালক বা সরকারি পরিচালকগণের নিকট অভিযোগ দায়ের করা যায়। অভিযোগ বা মামলা দায়ের করার সময় কোন উকিলের দরকার হয় না।
একটি সাদা কাগজে ভোক্তা তার নিজের নাম ,পিতার নাম ,মাতার নাম ,বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা লিখে ডাকযোগে বা কুরিয়ার যোগে বা ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ করার সময় অবশ্যই প্রমাণ হিসাবে পণ্য ক্রয়ের রশিদ বা ভিডিও সংযুক্ত করতে হবে। উভিযোগ করার সময়সীমা হলো,উদ্ভব হওয়ার এক মাসের মধ্যে অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ করার নিয়ম হলোঃ ১.লিখিত অভিযোগ করতে হবে। ২.ইমেইল, ফেসবুক মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি তেও করা যাবে। ৩.অভিযোগ করার সময় অবশ্যই ক্রয়কৃত পণ্যর প্রমাণ সংযুক্ত করতে হবে ও অভিযোগ কারীর নাম, পিতার নাম পুরোপুরি ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ইমেইল থাকলে ইমেইল এড্রেস দিতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে গণমাধ্যমের ভূমিকা হলোঃ ১.গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। একটি সমাজে যতগুলো অপরাধ সংঘটিত হয় তার মধ্যে ভোক্তার অধিকারগুলোর লংঘন অন্যতম। গণমাধ্যমগুলো ভোক্তাদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারে। ২.প্রিন্ট মিডিয়া ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। ৩.একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রিন্ট মিডিয়াগুলো টকশোর আয়োজন করতে পারে।
৪.ভোক্তাদের সচেতন করার জন্য মাঝে মাঝে বুলেটিন সংবাদ প্রকাশ করতে পারে। ৫.বেসরকারি ও সরকারি টেলিভিশন গুলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাজগুলো প্রচারের মাধ্যমে ভোক্তাদেরকে আরো দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে কোন ভোক্তা ভোক্তা -অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে এবং অভিযোগটি প্রমাণিত হলে জরিমানার যে ২৫ শতাংশ অর্থ পান তা ব্যাপকহারে প্রচার করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ছাত্র ,শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা হলোঃ- আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবকদের কিছু জনসচেতনামূলক কাজকর্ম করতে হবে। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের যা করতে হবে তা হল: ১.একজন ছাত্র মানে একটি পরিবার ।ছাত্ররা ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি তাদের গ্রাম ,শহর বা মহল্লায় আলোচনার ব্যবস্থা করবেন। ২. শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবেন। সেই সাথে ছাত্রদেরকে অনুপ্রাণিত করবেন, যাতে তারা সংশ্লিষ্ট জ্ঞান সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে দেয়। ৩.অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভোক্তা অধিকার জ্ঞান প্রদান করবেন। ৪.ছাত্র শিক্ষক বা অভিভাবক বা সমাজের যে কেউ একজন ভোক্তা হিসেবে প্রতারিত হলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বা উপ-পরিচালক বা মহাপরিচালক বরাবরে প্রমান সহকারে অভিযোগ করবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর জরিমানার যে ২৫ শতাংশ পাওয়া যায় তা সমাজের লোকদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।