লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতসহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত ও মানসম্মত পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন খান আরো বলেন, ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। বছরের প্রথম দিনেই সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামুল্যে পৌঁছে যাচ্ছে নতুন বই।
বাংলাদেশ সরকার এক অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে এ ক্ষেত্রে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে অর্জিত করেছে অভাবিত সাফল্য। বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৩% শতাংশ। যা সত্যি প্রশংসনীয়। বিশ্বে প্রাথমিক স্তর ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির সূচকে বাংলাদেশ এক নম্বরে। বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ অবস্থা, সেশন জটের কাল থাবার বিলুপ্তি, নিয়মিত ক্লাস, যথাসময়ে ফাইনাল পরীক্ষা- শিক্ষাঙ্গনে যেমন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন তা সবগুলোই নিশ্চিত করছে সরকার। বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষায় আধুনিকীকরণসহ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত প্রজন্মকে বিশিষ্ট আলেম-ওলামা-চিন্তাবিদ হওয়ার পাশাপাশি বাস্তব জীবনমুখী প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষমানব সম্পদে পরিণত করার পরিকল্পনাও গ্রহন করা হয়েছে। রীতিমত ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। প্রায় শতভাগ মেয়েই এখন স্কুলে যাচ্ছে। মেয়েদের জন্য বিদ্যালয়ে যে পরিবেশ থাকা দরকার, সরকার তা নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় এখন ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম স্থানে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল।
কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। এসময় তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতেৃত্বে গত ১৪ বছরে দেশের বিভিন্ন খাতে অর্জিত ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এ সময়ে দেশে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য সেবা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ খাদ্য, শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য, জ্বালনি ও বিদ্যুৎ, গ্রামীন অবকাঠামোসহ সব খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী বান্দব নীতিমালার ফলে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সূচকে বাংলাদেশকে বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য নিরসন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে সব গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের সব গ্রামকে সুন্দরভাবে সাজাতে কাজ করতে হবে।