প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। আমরা তো দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি চারবার প্রধানমন্ত্রী , আমাদের পরিবার দুর্নীতি যদি করতো তাহলে দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। মানুষের জন্য করতে এসেছি।
তিনি বলেন, কেউ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হয়ে, অন্তত এটা মেনে নিতে পারি না। চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের মানুষদের, ধন্যবাদ জানাই আমার দেশের জনগণকে, তারাই আমাকে সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি।
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, শুধুমাত্র পদ্মা সেতু না, তিনটা এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের, এটা আওয়ামী লীগ সরকারের করা। চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজারে। সারা দেশে রাস্তাঘাট পুল ব্রিজ করেছি। ১০০ সেতু, ১০০ সড়কের উন্নতি, এটা আমরা করতে পেরেছি। আগে কোনো সরকার এভাবে একসাথে করতে পেরেছে? এটা করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সরকার আমরাই পারি দেশের উন্নতি করতে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে বিএনপির আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৩৩৫ ডলার, সেখানে আমরা মাথাপিছু আয় নিয়ে গেছি ২৮২৪ ডলারে। বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আমরা আনতে পেরেছি। আমাদের সমাজের নিরাপত্তায় আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। আজ ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ বয়স্ক বিধবা ভাতা পান। যেখানে আমাদের খরচ হচ্ছে ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। সেজন্য আমাদের এই সামাজিক নিরাপত্তা। এর বাইরে প্রতিবন্ধীদের আমরা ভাতা দিই। দুই কোটি ৫৩ লক্ষ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। করোনার সময়ও সেটা বন্ধ হয়নি বরং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ১০০০ টাকা করে আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা ভাতা দিচ্ছি। যে যেই দল করুক না কেন যারা মুক্তিযোদ্ধা তিনি সম্মানীয়, এটা আমরা বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ওয়াদা দিয়েছিলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিদ্যুৎ দিয়ে প্রতিটি ঘর আলোকিত করবে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে এনেছিল। আমরা যখন সরকার গঠন করলাম সেই সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। প্রতিটা ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত করোনাকাল, ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এসব ধাক্কার মধ্যে আমাদের পড়তে হলো। আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি আমাদের আমদানি করতে হয়। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ল, সে কারণে কিছুদিনের জন্য আমাদের এখানে লোডশেডিং দিতে হয়েছে। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার অনুরোধ থাকবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা গৃহহীনদের জন্য ঘর করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেন নাই। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে আমরা আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি। আজ ৩৫ লক্ষ মানুষ বিনামূল্যে দুই কাঠা জমি-ঘর এবং জীবন-জীবিকার সুযোগ পাচ্ছে। এটা আমরা করে দিতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় অনেক দেশ হিমশিম খেয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এই কোভিড মোকাবিলা করেছি। বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। বিনামূল্যে টেস্ট করাতে পেরেছি। পরবর্তীতে কিছু দেশ আমাদের ওপহার দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাই। চিকিৎসা সেবাও বিনামূল্যে দিয়েছি। ১৫ হাজার সিট অতিরিক্ত করতে হয়েছে, অতিরিক্ত ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিতে হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার ডাক্তার, ৪০ হাজার নার্স আমরা নিয়োগ দিয়েছি। সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।