অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজ শ্রমিকদের দিয়ে করানোর বিধান রয়েছে। তবে বরগুনার তালতলী উপজেলায় এ প্রকল্পের একটি গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের কাজ শ্রমিকদের দিয়ে না করিয়ে খননযন্ত্রে (এক্সকাভেটর) করা হচ্ছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমিকরাও কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মরানিদ্রা স্লুইজের উত্তর পাড় হতে আলমগীর মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত একটি মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য ৪৫ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাগজে-কলমে শ্রমিক থাকলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এতে শ্রমিকরা যেমন কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি সড়কের পাশে থাকা গাছপালাসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য জামাল খান বলেন, রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফুট। এই রাস্তাটি নির্মাণ অনেক ব্যয়বহুল। রাস্তাটি অনেক উঁচু করে করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে ৪৫ জন শ্রমিক দিয়ে রাস্তাটি করার কথা ছিল। তবে এই টাকায় বর্তমানে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চান না। এ কারণে খননযন্ত্র দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ করতে হচ্ছে। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক শ্রমিক বলেন বলেন, বর্তমানে কাজকর্মের খুব অভাব। প্রায় সময় বসে থাকতে হয়। ঘরে বসে থাকার চেয়ে প্রতিদিন ৪০০ টাকার কাজ পেলে আমাদের অনেক উপকার হয়। কিন্তু সরকার যে কাজ শ্রমিক দিয়ে করতে বলেছে, তলতলীতে সেই কাজ করা হচ্ছে খননযন্ত্র দিয়ে। এতে শ্রমিকদের হক নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে আমি শ্রমিক দিয়ে উদ্বোধন করেছি, পরে কিছু কাজ ভেকু মেশিন দিয়ে করানো হয়েছে।
কর্মসংস্থান কর্মসূচি তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু বলেন, আমি শুধুমাত্র শ্রমিকের তালিকায় স্বাক্ষর করেছি। এছাড়া কাজ কখন শুরু হয়েছে এটা আমাকে ওই ইউনিয়ন পরিষদের কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগম বলেন, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে শ্রমিকের পরিবর্তে খননযন্ত্রের ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। খননযন্ত্র ব্যবহার করা হলে ওই কাজের বিল দেওয়া হবে না। এছাড়া এবার শ্রমিকদের নামে নামে অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম সাদিক তানভীর বলেন, শ্রমিকদের পরিবর্তে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।