মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাহিদার শেষ নেই। পৃথিবীতে মানুষের সব চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থাপনা একেবারে অপ্রতুল। তাই যারাই পাহাড়সম দৃঢ়তা অবলম্বন করে, আঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজের জীবনকে পরিচালিত করে, মহান প্রভুর দেয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করে, সফলতা তাদেরই পদচুম্বন করে। তারাই ইহকাল ও পরকালের চির সুখ-শান্তি লাভ করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা ধন ও জনের ক্ষতি, ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের (ধৈর্যশীলদের)। -(সূরা বাকারা, আয়াত, ১৫৫)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, চারটি গুণের অধিকারী মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে সফল এবং সবধরনের কল্যাণ অর্জন করবে-
১. আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়কারী অন্তর।
২. জিকিরে লিপ্ত জিহ্বা।
৩. কষ্ট সহিষ্ণু শরীর।
৪. এমন জীবন সঙ্গী যে নিজের ইজ্জত-আব্রু এবং স্বামীর সম্পদ হেফাজত করে। -(আল মুজামুল আওসাত, তাবারানী হাদিস নং ৭২১২)
ধৈর্যের বিভিন্ন স্তর
কোরআন ও হাদিসের পরিভাষায় ধৈর্যের (সবর) তিনটি শাখা রয়েছে-
১. নফসকে হারাম এবং নাজায়েজ বিষয় থেকে বিরত রাখা।
২. আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা।
৩. যেকোনও বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত মানুষ যেসব বিপদ-আপদের সম্মুখীন হয়, সেগুলোকে আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা। তবে বিদাপদের কষ্টের কারণে কারও মুখ থেকে কোন কাতর ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে গেলে কিংবা অন্যের কাছে তা প্রকাশ করলে তা ‘সবর’ পরিপন্থী হবে না।
সবরের তিনটি শাখাই পালনীয়। অনেকে শুধু তৃতীয় প্রকারকেই সবর মনে করে। প্রথম দুইটিকে সবর গণ্য করে না। অথচ এক্ষেত্রে প্রথম দুটি শাখাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। -(ইবনে কাসীর ১/৪২১)
সবর (ধৈর্য) ও শোকর অর্জনের উপায়
সবর ও শোকর অর্জনের অন্যতম উপায় হলো, ধর্মীয় বিষয়ে নিজের থেকে ভালো এবং উঁচু স্তরের মানুষদের দিকে তাকানো। আর পার্থিব বিষয়ে তুলনামূলক নিম্নস্তরের লোকদের দিকে তাকানো। এতে দ্বীন ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সে আরো অগ্রসর হতে পারবে। আর জাগতিক বিষয়ে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের প্রতি অন্তরে কৃতজ্ঞতা বোধ জাগ্রত হবে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি: দুটি গুণ যার মধ্যে পাওয়া যায় আল্লাহ তাআলা তাকে শুকরিয়া আদায়কারী এবং ধৈর্যশীল বান্দা হিসেবে গণ্য করেন। যার মধ্যে এই গুণ থাকে না তাকে শুকরিয়া আদায়কারী এবং ধৈর্যশীল হিসেবে গণ্য করা হয় না।
গুণ দুটি হলো-
১. যে দ্বীনের ব্যাপারে নিজের থেকে অধিক দ্বীনদার ব্যক্তির দিকে তাকায় এবং(ঐ গুণগুলো অর্জনের জন্য) তার অনুসরণ করে। জাগতিক বিষয়ে নিজের থেকে নিম্নস্তরের ব্যক্তির দিকে তাকায় এবং ওই ব্যক্তির থেকে নিজে মর্যাদাশীল অবস্থানে থাকার কারণে আল্লাহর প্রশংসা করে।
২. বিপরিতে যে দ্বীনের ব্যাপারে নিজের থেকে নিচু স্তরের লোকের দিকে তাকায়। জাগতিক বিষয়ে উঁচু স্তরের দিকে তাকায় ফলে পার্থিব সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সে আফসোস করে , আল্লাহ তাআলা তাকে শোকরগুযার ও ধৈর্যশীল হিসেবে বানান না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস, ২৫১২)
ধৈর্যধারণের দোয়া
কেউ বিপদগ্রস্ত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তায়ালা তাকে উত্তম প্রতিদান দেন এবং যে নেয়াতম হাতছাড়া হয়ে গেছে তার উত্তম বিকল্প দান করেন।
انا لله وانا اليه راجعون اللهم أجرني في مصيبتي واخلف لي خيرا منها
(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন আল্লাহুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লি খাইরান মিনহা)
হজরত উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন ,আমার স্বামী আবু সালামা ইন্তেকাল করলে নবীজি আমাকে এই দোয়া পড়তে বলেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তায়ালা আবু সালামার বদলে রাসূলুল্লাহ সা.-কে আমার স্বামী হিসেবে উপহার দিলেন। -(সহীহ মুসলিম,হাদিস, ৯১৮)