‘অপরাধকে না বলুন’- স্লোগান ধারণ করে অপরাধ প্রতিরোধ বিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। নতুন কর্মসূচি ‘নবজাগরণ’-এর আওতায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকিতে থাকা ৩৬ যুবক-যুবতীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে র্যাব।
মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামি, অপহরণকারী, মানবপাচারকারী, জালনোট কারবারি, ছিনতাইকারী ও ডাকাতসহ বিভিন্ন অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারে ৩৬ যুবক-যুবতীকে অপরাধকে দূরে রেখে স্বাবলম্বী করতে নবজাগরণ নামের নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে র্যাব। কক্সবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধ ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিহ্নিত করে এ প্রকল্পের আওতায় এনে সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করা হবে।
দেশের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে চৌকস এ বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অপরাধ পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে যে কর্মপরিকল্পনা করে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায় চালু হয় নতুন প্রকল্প ‘নবজাগরণ’। ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের এ প্রকল্পের আওতায় এনে অপরাধ থেকে দূরে থাকার জন্য নিরুৎসাহিত করতে পারলে সমাজে অপরাধ-প্রবণতা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করছে র্যাব।
র্যাব জানায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াসও হাতে নেওয়া হয়েছে। নবজাগরণ হলো র্যাবের আর্লি ইন্টারভেনশন। এ প্রকল্পে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়ায়নি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ‘নবদিগন্তের পথে’ নামের প্রকল্পে র্যাব যেসব কার্যক্রম করেছে, সেগুলো ছিল পোস্ট ইন্টারভেনশন। ওই কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ৪২১ জনকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যার মধ্যে ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪০৫ জন জলদস্যু।
র্যাবের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নবজাগরণের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস হাতে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে, তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে। তালিকাভুক্তদের স্বাবলম্বী করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যটননির্ভর পেশা হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, টুরিস্ট গাইড, ড্রাইভিংকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের উপস্থিতিতে এ কর্মসূচির যাত্রা শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নবজাগরণের ব্যাপ্তি পর্যায়ক্রমে বাড়বে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাম্য বৈঠক, কমিউনিটিভিত্তিক নানা কর্মসূচি, সভা-সেমিনার ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। র্যাবের নতুন এই কার্যক্রমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৩৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়। প্রশিক্ষণের জন্য ৪-৫ জন করে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়। যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য আইকন হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকগুলো বৈধ পেশায় যুক্ত হতে উৎসাহ পেয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর। তারা কোনো উৎপাদনশীল কাজে জড়িত না। কেউ স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে, কেউ বেকার। কেউ অল্প শিক্ষিত। আবার কেউ ভবঘুরে টাইপের। কেউ ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করলেও মানসম্মত ছবি তুলতে পারে না। উপার্জন বহুমুখী করতেই পরিবারের সদস্যদের নবজাগরণের আওতায় আনা হয়েছে। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি বলেন, র্যাবের কর্মপন্থায় যুক্ত হওয়া ‘নবজাগরণ’ সমাজের অপরাধ-প্রবণতা কমাতে অনুষঙ্গ হিসাবে কাজ করবে।