শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বরগুনার তালতলীতে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। উপজেলার প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ শুঁটকি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলেপল্লিগুলোতে ব্যবসায়ী, মালিক ও শ্রমিকদের আনাগোনা বেড়েছে। তালতলীর আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। এ সময় শুঁটকিপল্লি ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকের পদচারণায় মুখর থাকে।
জানা যায়, প্রতিটি শুঁটকিপল্লি থেকে সপ্তাহে ১০০-১৫০ মণ মাছ রপ্তানি হয়। নদী থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকিপল্লিতে আনার পর নারী শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন। এরপর মাছগুলো ধুয়ে মাচায় শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে যায়। পরে এসব শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। আরও জানা গেছে, এখানকার শুঁটকিতে কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয় না বলে চাহিদা একটু বেশি।
বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭০০-৮০০ টাকা, রূপচান্দা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার, মাইট্যা ৮০০ থেকে এক হাজার, লইট্টা ৬০০-৭০০, চিংড়ি ৭০০-৯০০ টাকা এবং ছোট মাছের শুঁটকি ৩০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তালতলীর আশারচর শুঁটকিপল্লি ঘুরে দেখা যায়, একের পর এক মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্র থেকে আসছে। প্রায় ৬ শতাধিক জেলে ও মালিক শুঁটকি উৎপাদন করতে ছোট ছোট অস্থায়ী ৩২টি ঘর তৈরি করেছেন। কেউ কেউ শুঁটকির মাছ রোদে শুকাচ্ছেন।
এখানে প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা অন্যতম। এছাড়া চিংড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে। কালাম, সুকান্ত, রফেজসহ আশারচরের কয়েকজন জেলে বলেন, মেইন রোড থেকে শুঁটকিপল্লি পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এই সড়ক সংস্কার হলে আমরা শুঁটকি ট্রাকে করেই লোড দিতে পারব। এতে পরিবহন খরচ কম হবে। এছাড়া টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।
টিউবওয়েল ও টয়লেট নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। রূপচাঁন হাওলাদার, আলতাফ, মোতালেব সরকারসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের দাম, শ্রমিকের মজুরি সব কিছু বেড়েছে। ফলে এ বছর ব্যবসা কেমন হবে তা নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। তবে সরকারিভাবে বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আমরা বেঁচে যেতাম। কারণ দেশ থেকে সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানির কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। নির্ভেজাল ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় এখানকার শুঁটকির কদর বেশি। সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানির জন্য মৎস্য অধিদপ্তরে সুপারিশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, শুঁটকিপল্লিগুলোতে টিউবওয়েল ও টয়লেট নেই। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাস্তা, টিউবওয়েল ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।