দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় ফরজ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। জামাতের সঙ্গে সময় মতো নামাজ পড়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘…নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ -(সুরা নিসা: ১০৩)
উম্মু ফারওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।’ -(আবু দাউদ হা/৪২৬, ১/৬১; তিরমিজি হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; মিশকাত হা/৬০৭)
জিব্রাইল (আ.) টানা দুই দিন এসেছেনে এবং পবিত্র কাবা চত্বরে মাকামে ইবরাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে নবীজির ইমামতি করেছেন। প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরি বা শেষ ওয়াক্তে নামাজ পড়িয়ে দুই দিনে মোট ১০ ওয়াক্ত নামাজের পছন্দনীয় সময়কাল ওই দুই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।-(মুত্তাফাকুন আলাইহ, মেশকাত: ৫৮৬২-৬৩; আবুদাউদ: ৩৯৩; তিরমিজি: ১৪৯)
আর আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাকে রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন। (আবুদাউদ: ৪২৬; তিরমিজি১৭০)। আবার যখন লোকেরা জামাতে নামাজ দেরি করে পড়বে (অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে পড়বে না), তখন একাকি নামাজ আদায় করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -(মুসলিম: ৬৪৮; নাসায়ি: ৮৫৯)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেরই সুন্নত সময় সম্পর্কে হাদিসে নিজেই বর্ণনা করেছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ফজরের নামাজ সম্পর্কে রাফে বিন খাদিজ রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ফজরের নামাজ চারদিক আলোকিত হয়ে যাওয়ার পর পড়বে। কেননা তাতে অধিক সওয়াব রয়েছে।’ (জামে তিরমিযী ১৫৪)
যোহরের নামাজ সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা হয়েছে,‘রোদের তাপ বেশি হলে তাপমাত্রা কমে আসার পর যোহরের নামাজ পড়।’-(সহীহ বুখারী ৫৩৬)
আসরের নামাজ সম্পর্কে জাবির রা. বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামাজ আদায় করতেন দ্বিপ্রহরে। আর আসর নামাজ আদায় করতেন সূর্য শুভ্র ও উজ্জ্বল থাকতেই।’ (সুনান নাসায়ী ৫২৭)
এশার নামাজ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, একরাতে আমরা ইশার নামাজ আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপেক্ষায় ছিলাম। রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা আরো কিছু বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন। আমরা জানতাম না যে, জরুরী কোন কাজ তাঁকে তাঁর গৃহে ব্যস্ত রেখেছিল, না অন্য কোন কাজে তিনি মশশুল ছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে বললেন,
তোমরা এমন এক নামাজের অপেক্ষা করছ, যার জন্য তোমরা-ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বীগণ অপেক্ষা করেনি। আমার উম্মতের উপর যদি তা ভারী না হতো, তাহলে তাদের নিয়ে এই সময়ই নামাজ আদায় করতাম। তারপর তিনি মুআযযিনকে আদেশ দিলেন। সে নামাজের ইকামত দিল এবং তিনি সালাত আদায় করলেন। (সহীহ মুসলিম ৬৩৯)