জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক নারী আকলিমা বেগম (৬২)। স্বামী মারা গেছেন ১৮ বছর আগে। তার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হাতে তুলে নিয়েছেন নৌকার বৈঠা।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের দোয়ানী গ্রামের মৃত ফুলমিয়ার স্ত্রী আকলিমা বেগম। তিনি দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া সুতাবাড়িয়া নদীর একমাত্র খেয়ার মাঝি। আত্মসম্মানবোধ প্রবল আকলিমা স্বামীর মৃত্যুর পর ভিক্ষা না করে খেয়া পারাপার করছেন। খেয়া পারাপারের অর্থ দিয়ে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েকে। ছোট মেয়েকে স্বামী ফেলে রেখে চলে গেছেন। এখন মেয়ে ও নাতনির দায়িত্বও তার কাঁধে।
সরেজমিনে নদী পাড়ে দেখা যায়, সকাল ৭টা থেকে আকলিমার জীবিকা অর্জনের যুদ্ধ শুরু হয়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মাঝে মাঝে বড় ভাই তাকে সহযোগিতা করলেও বেশির ভাগ সময় একাই দেখা যায় তাকে। এই নদী দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ পারাপার হচ্ছে। অনেকে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল নিয়েও পারাপার হয়। এখানে নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম হলো আকলিমা বেগমের খেয়ার নৌকা। পারাপারে ২-৫ টাকা করে যাত্রী প্রতি ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন ৩-৪শ টাকা আয় করে থাকেন।
প্রতিবেশী আসলাম মিয়া বলেন, এখন অনেকেই অভাবে ভিক্ষা করে থাকেন। কিন্তু আকলিমার আত্মসম্মানবোধ প্রবল। তিনি ভিক্ষা না করে নিজে খেটে খাচ্ছেন, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তার এই পেশাকে আমরা সম্মান জানাই।
বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সিরাজ খান বলেন, আকলিমা বেগম অনেক দিন ধরে এই নদীতে খেয়া পারাপার করছে। তিনি অসুস্থ থাকলে ভাইয়েরা তখন তাকে সহযোগিতা করে।
ওই এলাকার মসজিদের ইমাম হাফেজ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে এই খেয়ায় করে পারাপার হই। তার স্বামী নেই, তিনটা মেয়ে আছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিছে, ছোট মেয়ের স্বামী ফেলে রেখে চলে গেছে। এই বয়সে এসে তিনি এত কষ্ট করছেন। তার মতো অসহায় মানুষরা ভিক্ষা করে। কিন্তু তিনি ভিক্ষা না করে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আকলিমা বেগমের মেয়ে জাহানুর বলেন, এই গ্রামে তেমন কোনো কাজ নাই। তাই যখন যে কাজ পাই সেটা করি। মানুষের ক্ষেতের ডাল তুলি, হাঁস-মুরগি পালি। এগুলো বিক্রি করি খাই। আর কী করমু?
আকলিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ১৮ বছর আগে। তারপর থেকে আমি এই নৌকায় করে মানুষজন এপার থেকে ওপারে নিয়ে যাই। ঝড় হোক বন্যা হোক আমার এই খেয়া চালাতেই হয়। আমার জায়গা নাই, জমি নাই, আমার যদি কিছু থাকত, তাহলে আমি সেটা করে খেতাম। এই কষ্টের কাজ করতাম না।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমি আকলিমা বেগমের কথা আগে থেকেই জানি। উনি একজন সফল জয়িতা। এই ধরনের সফল জয়িতাদের আমরা খুঁজি। আকলিমা বেগমকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছি, আকলিমা বেগমকে যেন সহযোগিতা করা হয়।