৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সাল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি যুগ সন্ধিক্ষণ। এটা যেন পূর্বাপরের এক মেলবন্ধন। দুটি বিপরীত দ্বান্দ্বিক রাজনৈতিক সমীকরণের এক ঐতিহাসিক মোহনা। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কঠিন; শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এই কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষারই এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হলো ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।
পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর হলো বাংলাদেশের নিপীড়িত বঞ্চিত ও শোষিত মানুষের শৃঙ্খলমুক্তির এক অধ্যায়; যা এতোদিন পর্যন্ত বাকশালের নাগপাশে বন্দি ছিল।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে একটি দিক প্রতীয়মান হবে যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা লাভ করি বটে। কিন্তু ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে এদেশের জনগণ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। কারণ ৭২-৭৫ পর্যন্ত মানুষ ছিল মৌলিক অধিকার তথা বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার এমনকি রাজনৈতিক স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত।
স্বাধীন দেশে আওয়ামী লীগ এমন দুঃশাসন কায়েম করেছিল যার ফলে দুর্ভিক্ষ, চুরি, ডাকাতি, হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন, শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা, কালোবাজারী, মুনাফাখোরি, মজুদদারী, চোরাকারবারী এবং সবশেষে বাকশাল কায়েম করে মানুষের মৌলিক অধিকারকে হরণ করে নেয়।
সময়ের স্রোতে আওয়ামী লীগের চরম ব্যর্থতার সমাধির ওপর ৭ নভেম্বর দাঁড়িয়ে যায় জনগণের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের সোপান। সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ রেখে দেশের ও নিজেদের প্রয়োজনে জিয়াউর রহমানকে কারাগারের অন্ধকার জিঞ্জির ভেঙে বের করে নিয়ে আসে আলোয়।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি সম্পর্কে বিশেষত জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এত যে গোস্যা ও তীর্যক মনোভাব তার প্রধানতম কারণ হচ্ছে শেখ মুজিবের পলায়নপর মনোবৃত্তি ও নেতাদের ব্যর্থতার জন্য ১৯৭১ সালেই আওয়ামী লীগের হাত থেকে রাজনৈতিক ট্রফি জিয়াউর রহমানের হাতে চলে যায়।
৭ নভেম্বর কারাগারের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন দেশের মুকুটহীন সম্রাট; যা তাকে পরবর্তীতে রাজনৈতিক ময়দানের স্বার্থকতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক মহান নেতায় পরিণত করে। অসীম সাহস, প্রগাঢ় দেশপ্রেম, দূরদৃষ্টি, ন্যায়বান ও সত্যনিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন সময়ের বরপুত্র।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সময়ের বরপুত্র হয়েছিলেন সত্য কিন্তু তিনি সময়কে কর্মের অধীন করে কালপ্রবাহকে ধাবিত করেছেন অনাধিকালের স্বার্থকতার এক যৌক্তিক মোহনায়।
স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মানুষের কাঙিক্ষত মুক্তির প্রয়োজনে জিয়াউর রহমান এমন একজন আলোচিত ব্যক্তি, এমন এক অবশ্যম্ভাবী চরিত্র হয়ে উঠেন যা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতার মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি তার দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দেশকে নিশ্চিত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে তুলে আনেন।
আওয়ামী লীগ বিশেষ করে শেখ হাসিনা যখন জিয়াউর রহমানের নাম স্মরণ করে তখন তাদের হাজার ব্যর্থতার ঘটনায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে এবং কোটি মানুষের ভালোবাসার সফল সারথি জিয়াউর রহমান তাদের কাছে হয়ে উঠেন অসহনীয়। তাদের বক্তব্য হয়ে যায় অরাজনৈতিক, অসংলগ্ন, পরশ্রীকাতর ও হিংসাত্মক। হাসিনার জিদ যায় পারদের ব্যরোমিটারের শেষ অঙ্কে।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আমি হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা সঞ্চিত করে স্যালুট ও অভিনন্দন জানাই স্বাধীনতার মহান ঘোষক লোকান্তরিত মহানায়ক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে; যিনি জীবন ঝুঁকি নিয়ে স্বশরীরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশিদের একটি জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের গোড়াপত্তন ও স্বাধীনতার মূল আকাঙক্ষা গণতন্ত্রের অভিযাত্রার সূচনা করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী, স্বাধিকার রক্ষার আন্দোলনকারী ও প্রকৃত দেশপ্রেমের পূজারীদের কাছে আমার নেতা জিয়াউর রহমান আইকন হয়ে থাকবেন।