ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জাতীয় গৃহায়ন মিরপুর বিভাগের প্রকৌশলী রাজু ও জনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রামগঞ্জের কিংবদন্তি সাবেক এল জি আর ডি প্রতিমন্ত্রী মরহুম জিয়াউল হক জিয়ার অষ্টম মৃত্যু বার্ষিকী । এস আলমের সম্পদ নিলামের উদ্যোগ জনতা ব্যাংকের অবশেষে রুনাকে বেছে নিলেন শাহিন কুমিল্লার দেবিদ্বারে বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তিন ঘণ্টারও বেশি যানযট “ ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় ডেইরি ফার্মের আড়ালে কাটা হচ্ছে পাহাড় তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রয়োজন .আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক মজু। পাহাড়তলী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২ জন মক্কা মদিনা জেদ্দা প্রবাসী ভাইদের নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা: কোন পথে এগুচ্ছে বিএনপি

সেই মোসলেহ উদ্দিনকে প্রধান প্রকৌশলী বানাতে তদবির

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে দুর্নীতিবাজ এক প্রকৌশলীকে নিয়োগের জন্য জোর চেষ্টা-তদবির চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর মিরপুর, আজিমপুর এবং মতিঝিলের ফ্ল্যাট প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বসাতে চেষ্টা করছে দুর্নীতিবাজ একটি চক্র। এ কাজ সমাধা করতে তারা ২০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নেমেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ চক্রটি তদবিরের মাধ্যমে গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) পদ থেকে মোসলেহ উদ্দিনকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন তাকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার চেষ্টা চলছে। এ কাজে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ছাত্রজীবনে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। তার ভাই নাদিম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৫তম বিসিএসে যোগ দিয়ে পুলিশের এসপি হিসেবে র‌্যাব-৮ ও এসবিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানা গেছে, বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ফেনী ও ঢাকার শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্টগ্রাম জোনেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে সোহেল রানা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। একই দিন অভিযোগ দেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের পক্ষে মো. বদরুদ্দীন ওমর। অভিযোগে মোসলেহ উদ্দিনের ছাত্রজীবন, রাজনৈতিক পরিচয়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্পদ অর্জনের তথ্য তুলে ধরা হয়। দুদক সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করছে সংস্থাটি।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, ঠিকাদার জি কে শামীমকে সহযোগিতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০২০ সালে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও মোসলেহ উদ্দিনসহ ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। ১৮, ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গণপূর্তের প্রকৌশলী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন তারা। এসব অভিযোগের কারণে মোসলেহ উদ্দিনকে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বঞ্চিত দেখিয়ে কিছু প্রকৌশলী নেতাকে ম্যানেজ করে মোসলেহ উদ্দিনকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে বসানোর মিশনে নেমেছে একটি চক্র। যদিও বিসিএস ১৫তম ব্যাচের গ্রেডেশন তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। এক নম্বরে থাকা প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মইনুল ইসলামকে ডিঙিয়ে এ পদ বাগাতে চাইছেন মোসলেহ উদ্দিন।

যত অভিযোগ : মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ও নোয়াখালীর চাটখিলের দৌলতখা গ্রামে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে তার। তার স্ত্রী-সন্তানের নামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় গৃহায়ন মিরপুর বিভাগের প্রকৌশলী রাজু ও জনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

সেই মোসলেহ উদ্দিনকে প্রধান প্রকৌশলী বানাতে তদবির

আপডেট সময় ০১:২০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে দুর্নীতিবাজ এক প্রকৌশলীকে নিয়োগের জন্য জোর চেষ্টা-তদবির চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর মিরপুর, আজিমপুর এবং মতিঝিলের ফ্ল্যাট প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বসাতে চেষ্টা করছে দুর্নীতিবাজ একটি চক্র। এ কাজ সমাধা করতে তারা ২০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নেমেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ চক্রটি তদবিরের মাধ্যমে গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) পদ থেকে মোসলেহ উদ্দিনকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন তাকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার চেষ্টা চলছে। এ কাজে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ছাত্রজীবনে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। তার ভাই নাদিম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৫তম বিসিএসে যোগ দিয়ে পুলিশের এসপি হিসেবে র‌্যাব-৮ ও এসবিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানা গেছে, বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ফেনী ও ঢাকার শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্টগ্রাম জোনেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে সোহেল রানা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। একই দিন অভিযোগ দেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের পক্ষে মো. বদরুদ্দীন ওমর। অভিযোগে মোসলেহ উদ্দিনের ছাত্রজীবন, রাজনৈতিক পরিচয়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্পদ অর্জনের তথ্য তুলে ধরা হয়। দুদক সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করছে সংস্থাটি।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, ঠিকাদার জি কে শামীমকে সহযোগিতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০২০ সালে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও মোসলেহ উদ্দিনসহ ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। ১৮, ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গণপূর্তের প্রকৌশলী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন তারা। এসব অভিযোগের কারণে মোসলেহ উদ্দিনকে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বঞ্চিত দেখিয়ে কিছু প্রকৌশলী নেতাকে ম্যানেজ করে মোসলেহ উদ্দিনকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে বসানোর মিশনে নেমেছে একটি চক্র। যদিও বিসিএস ১৫তম ব্যাচের গ্রেডেশন তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। এক নম্বরে থাকা প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মইনুল ইসলামকে ডিঙিয়ে এ পদ বাগাতে চাইছেন মোসলেহ উদ্দিন।

যত অভিযোগ : মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ও নোয়াখালীর চাটখিলের দৌলতখা গ্রামে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে তার। তার স্ত্রী-সন্তানের নামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।