জীবনে সঙ্গীর মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়া, সংস্পর্শের প্রতিক্রিয়া অস্বীকারের কোনও সুযোগ নেই। ভালোর সংস্পর্শ জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে, মন্দ সংস্পর্শ জীবনে অমঙ্গল বয়ে আনে। এজন্যই প্রচলিত প্রবাদ আছে, সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।
মন্দ মানুষের সঙ্গে চলাফেরার কারণে মানুষের চলা-ফেলা, বলা কওয়া, চিন্তা, চেতনার মাঝে এর প্রভাব পড়ে। ইসালামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, নবজাতক ও শিশুরা স্বভাবগতভাবে ভালো স্বভাবের হয়ে থাকে তবে তাকে মন্দ পরিবেশে ছেড়ে দিলে সে আস্তে আস্তে পরিবেশের খারাপ বিষয়গুলোর সঙ্গে মিশে যায়। যে শিশুটি এক সময় অশালীন ভাষার সঙ্গে পরিচিত ছিল না, সে মন্দ পরিবেশে থেকে অশালীন ভাষা, ব্যবহার শিখে ফেলে। এজন্য গল্প-আড্ডার আসর ও বন্ধু নির্বাচনে অত্যন্ত চিন্তাভাবনা করে কাজ করা উচিত।
বন্ধু হিসেবে সৎ মানুষদের নির্বাচন করলে তাদের থেকে পুরোপুরি উপকার না হলেও কিছু না কিছু অংশ অবশ্যই পাওয়া যাবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
‘ভালো এবং দুষ্ট ব্যক্তি মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ও হাঁপরে ফুঁকদাতা (কামার) ব্যক্তির মতো। মিশক বহনকারী ব্যক্তির অবস্থা তো এমন যে সে হয়তো এ মিশক তোমাকে উপহার দেবে অথবা তুমি তার থেকে তা খরিদ করবে অথবা তুমি তার থেকে এর সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর হাপরে ফুঁকদাতা ব্যক্তি হয়তো সে তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি : ২৬৪১)
সঙ্গী নির্বাচনের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সুরা আলে ইমরান : ২)। আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশে, এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তোমার দু’চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার যিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।’ -(সুরা কাহাফ, আয়াত, ২৮)
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেয়।’ (তিরমিজি : ২৩৪৭)।
হজরত আলী (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি চিন্তা-ভাবনা করে যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো। আর একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো।’ (বুখারি : ২৪৩৯)।