ঢাকা ০১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির সমাবেশ ১০ সাংগঠনিক বিভাগে

দশ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এই কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সোমবার বিকালে দলটির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এসব কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়। পরে রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে তৃণমূলকে আরও চাঙা রাখতে শীর্ষ নেতাদের এলাকায় অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এজন্য ঢাকায় অবস্থানরত তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায় এসব তথ্য।

তৃণমূলের থানা-উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে চলমান কর্মসূচি শেষ হবে আগামী শনিবার। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তবে কয়েকটি জেলায় নতুন করে মামলার কারণে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলটির হাইকমান্ড। নীতিনির্ধারকরা জানান, এখনই তারা কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে কর্মসূচির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি চলতেই থাকবে। ১০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচি আছে। এরপর আবার নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই আন্দোলন চলবে চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নয় বরং জোর করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। বিএনপির জনপ্রিয়তা এবং সভা-সমাবেশে বিপুল জনসমাগম দেখে আওয়ামী সরকার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। এজন্যই তারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশকেও বরদাশত করছে না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট-এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। সরে গিয়ে নিরপেক্ষ একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে-এই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। তৃণমূলে চলমান কর্মসূচির মধ্যেই সোমবার গুলশান কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে ভার্চুয়ালে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকাল ৪টা থেকে পৌনে তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মাহবুবের রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, শ্যামা ওবায়েদসহ সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা।

সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে তৃণমূলের চলমান আন্দোলন নিয়ে সফলতা ও ব্যর্থতা-দুটিই তুলে ধরেন নেতারা। তবে সফলতা বেশি জানিয়ে তারা বলেন, কর্মসূচিতে সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে থানা, উপজেলা, পৌর ইউনিয়ন পর্যায়ে এ রকম কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। এ কর্মসূচিতে স্থানীয় পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগম তৃণমূল নেতাকর্মীদের আরও উজ্জীবিত করেছে। স্থানীয় নেতারা তাদের জানিয়েছেন, কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। চট্টগ্রাম বিভাগের একজন নেতা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী স্ব স্ব এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ-সদস্যরা প্রতিটি বিক্ষোভ সমাবেশে থাকার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে এসব কর্মসূচিতে তাদের পেয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। একটি আসনে স্বাভাবিকভাবে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চান। তারা এবার সব দ্বন্দ্ব-ভেদাভেদ ভুলে এক মঞ্চে কর্মসূচি পালন করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলা যায়। একই সঙ্গে আন্দোলনের একটি মাঠ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে থানা-উপজেলা ও জেলার শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করা হয়। একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, স্থানীয় শীর্ষ নেতা হয়ে যদি ঢাকায় অবস্থান করেন, তাহলে তৃণমূল নেতাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো-কোনো কর্মসূচি পালনের পর বিভিন্ন জায়গায় মামলা-হামলার শিকার হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতাদের পাশে পান না। অনেক নেতা আছেন পরিবারসহ ঢাকা থেকেও তৃণমূলের শীর্ষ পদ আঁকড়ে রেখেছেন। আবার অনেকে আছেন থানা-উপজেলা বা পৌর কমিটির শীর্ষ নেতা; কিন্তু সপরিবারে থাকেন জেলা সদরে। যাদের বাড়ি সংশ্লিষ্ট থানা, উপজেলা বা পৌর এলাকায়, তাদেরই শীর্ষ পদ দেওয়া উচিত। পরে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। নির্দেশনা দেন এরকম যারা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ঢাকায় অবস্থান করেন তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপির সমাবেশ ১০ সাংগঠনিক বিভাগে

আপডেট সময় ০৫:৪১:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

দশ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এই কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সোমবার বিকালে দলটির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এসব কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়। পরে রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে তৃণমূলকে আরও চাঙা রাখতে শীর্ষ নেতাদের এলাকায় অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এজন্য ঢাকায় অবস্থানরত তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায় এসব তথ্য।

তৃণমূলের থানা-উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে চলমান কর্মসূচি শেষ হবে আগামী শনিবার। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তবে কয়েকটি জেলায় নতুন করে মামলার কারণে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলটির হাইকমান্ড। নীতিনির্ধারকরা জানান, এখনই তারা কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে কর্মসূচির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি চলতেই থাকবে। ১০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচি আছে। এরপর আবার নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই আন্দোলন চলবে চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নয় বরং জোর করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। বিএনপির জনপ্রিয়তা এবং সভা-সমাবেশে বিপুল জনসমাগম দেখে আওয়ামী সরকার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। এজন্যই তারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশকেও বরদাশত করছে না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট-এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। সরে গিয়ে নিরপেক্ষ একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে-এই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। তৃণমূলে চলমান কর্মসূচির মধ্যেই সোমবার গুলশান কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে ভার্চুয়ালে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকাল ৪টা থেকে পৌনে তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মাহবুবের রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, শ্যামা ওবায়েদসহ সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা।

সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে তৃণমূলের চলমান আন্দোলন নিয়ে সফলতা ও ব্যর্থতা-দুটিই তুলে ধরেন নেতারা। তবে সফলতা বেশি জানিয়ে তারা বলেন, কর্মসূচিতে সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে থানা, উপজেলা, পৌর ইউনিয়ন পর্যায়ে এ রকম কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। এ কর্মসূচিতে স্থানীয় পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগম তৃণমূল নেতাকর্মীদের আরও উজ্জীবিত করেছে। স্থানীয় নেতারা তাদের জানিয়েছেন, কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। চট্টগ্রাম বিভাগের একজন নেতা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী স্ব স্ব এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ-সদস্যরা প্রতিটি বিক্ষোভ সমাবেশে থাকার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে এসব কর্মসূচিতে তাদের পেয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। একটি আসনে স্বাভাবিকভাবে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চান। তারা এবার সব দ্বন্দ্ব-ভেদাভেদ ভুলে এক মঞ্চে কর্মসূচি পালন করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলা যায়। একই সঙ্গে আন্দোলনের একটি মাঠ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে থানা-উপজেলা ও জেলার শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করা হয়। একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, স্থানীয় শীর্ষ নেতা হয়ে যদি ঢাকায় অবস্থান করেন, তাহলে তৃণমূল নেতাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো-কোনো কর্মসূচি পালনের পর বিভিন্ন জায়গায় মামলা-হামলার শিকার হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতাদের পাশে পান না। অনেক নেতা আছেন পরিবারসহ ঢাকা থেকেও তৃণমূলের শীর্ষ পদ আঁকড়ে রেখেছেন। আবার অনেকে আছেন থানা-উপজেলা বা পৌর কমিটির শীর্ষ নেতা; কিন্তু সপরিবারে থাকেন জেলা সদরে। যাদের বাড়ি সংশ্লিষ্ট থানা, উপজেলা বা পৌর এলাকায়, তাদেরই শীর্ষ পদ দেওয়া উচিত। পরে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। নির্দেশনা দেন এরকম যারা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ঢাকায় অবস্থান করেন তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য।