রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃ-বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন সুলতানুল আরেফিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলে চাকরিও নেন। সেখান থেকে যোগ দেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র ক্যাশ অফিসার হিসেবে। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দেন। নাম লেখান কৃষিতে। দুই বছরের মধ্যেই বাজিমাত করেছেন স্মার্ট এই কৃষক।
সুলতানুল আরেফিন রাজশাহী নগরীর হড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ধামিলা এলাকায় প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ফলবাড়ি’ কৃষি খামার।
বাগানের পতিত সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন নিরাপদ লাউ। প্রতিদিন গড়ে খেত থেকে ২০০ লাউ উঠছে। খেত থেকে সরাসরি এই লাউ চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। ভালো দাম পাওয়া খুশি সুলতানুল আরেফিন।
সুলতানুল আরেফিন বলেন, এখন এক দিন পর পর ৪০০-৫০০ পিস লাউ উঠে। প্রতি পিস খেত থেকেই বিক্রি হয়ে যায় ২২ টাকায়। প্রথম দিকে স্থানীয় পাইকারি ক্রেতারা আসতেন। এখন ঢাকার পাইকাররা এসে লাউ নিয়ে যান। তিনি আশা করেন, আরও তিন মাস লাউ ধরবে। লাউ থেকেই শুধু ৩ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
ফলবাড়ির লাউ চাষ তদারকি করেন গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার। তিনি বলেন, এলাকায় অনেক আমবাগান রয়েছে। বাগানের পতিত জমিতে লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এই কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য, সুতানুল আরেফিন তার আমবাগানের পতিত জমিতে লাউ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, ইওলো ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশকসহ বিষমুক্ত লাউ চাষের কলাকৌশল শেখানো হয়েছে। এখন তিনি প্রতিদিন ২০০ পিস লাউ বিক্রি করছেন। ফলে তার বাগান পরিচর্যায় প্রতিদিন যে খরচ হয় সেটা লাউ বিক্রি করেই উঠে আসছে। তার দেখাদেখি অন্যরাও বাগানের পতিত জমিতে চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের হিসেবে, ২০০০-২০১০ মৌসুমে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সবজির আবাদ ছিল ৬০ হাজার ৪৫১ হেক্টর। সেই বছর সবজি উৎপাদন হয় ৯ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৯ টন। ওই মৌসুমে কেবল রাজশাহী জেলায় ২১ হাজার ৫০৮ হেক্টরে সবজি উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টন।
গত ২০২১-২০২২ মৌসুমে এই অঞ্চলে সবজির আবাদ হয় ৭৮ হাজার ৪৯২ হেক্টর। তা থেকে সবজি উৎপাদন হয়েছেন ১৪ লাখ ৮৫৭ টন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৯ হাজার ৪০৩ হেক্টরে সবজি ফলেছে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪২ টন।
আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমের এই অঞ্চলে ১ লাখ ৬ হাজার ৮৫৫ হেক্টর ফল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৭ হাজার ৮৯২ হেক্টর জমিতে ফলবাগান ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অঞ্চলে ফলবাগানের একটি বড় অংশ নতুন। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত এই ফলবাগান গড়ে তুলেছেন কৃষি উদ্যোক্তারা। এসব বাগানের পতিত জমি সবজি চাষের আওতায় আনা গেলে পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির গতি।