রংপুর থেকে: নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (০২ আগস্ট) বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
গত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই।
তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে।
দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে যখনই এসেছে রংপুরে কখনো মঙ্গা হয় নাই। রংপুরে কখনো খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের মানুষের উন্নতি করা।
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলে আর কখনো, কোনদিন, জীবনেও কোন দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেইভাবে আপনাদের এ রংপুর বিভাগের উন্নয়ন করে দিচ্ছি।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল, এ রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। ওই খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কাজ হয়।
তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে। আজকে হতদরিদ্র বলতে গেলে নাই, মাত্র ৫ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেই টুকুও থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার হারাবার কিছু নেই। সব হারিয়েও একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফিরে এসেছি দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন যোগাবো, প্রতিটি মানুষকে ঘর করে দেবো, জীবনমান উন্নত করবো।
একটি গোষ্ঠী দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, এখানে একটা গোষ্ঠী আছে যারা সব সময় দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বার বার ক্ষমতা দখল, হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।
দেশের মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে, অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। এ ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ছবিসহ ভোটার লিস্ট করেছি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছি।
দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা, ভাই, সব হারিয়েছি। দেশের মানুষ, দেশের জনগণ, এটা তো আমার সংসার, এটাই আমার আপনজন।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের (জনগণ) মাঝে আমি খুঁজে পাই আমার বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। বোনের স্নেহ। কাজেই আপনাদের জন্য বাবার মতো যদি প্রয়োজন হয় এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন (বকুল)।
বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে জনসভা মাঠে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ২৭টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এর আগে বুধবার (০২ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১টার দিকে হেলিকপ্টারে রংপুর পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী রংপুর সার্কিট হাউসে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এদিকে সকাল থেকে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে গোটা রংপুর শহর। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভা মাঠে জড়ো হন তারা। সমাবেশ মাঠ ছাড়াও আশপাশের এলাকায় ছিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
‘শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার’; ‘শেখ হাসিনার দুই নয়ন, রংপুরের উন্নয়ন’; ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম’ নানা স্লোগানে মুখর ছিল সমাবেশ মাঠসহ আশপাশের এলাকা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত তোরণ-ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা শহর।