এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০২১ সালের এক বৈঠকে তাদের কীটনাশক নির্বাচন কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) প্রযুক্তি আনা হবে। কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। এমনকি এ প্রযুক্তি কেনার কোনও প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই বছর আগে থেকেই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এখন ডেঙ্গুর বিস্তার অনেক কম থাকতো।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, কীটনাশক নির্বাচন কমিটি ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তখন ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি সভায় আবারও একই সিদ্ধান্ত নেয় ওই কমিটি।
বর্তমানে মশার লার্ভা নিধনে প্রতিদিন সকালে টেমিফস ওষুধ ব্যবহার করছে ডিএসসিসি। আর বিকালে ফগিংয়ে ব্যবহার করছে মেলাথিওন ও ডেল্টামাইথিন। লার্ভি সাইডিংয়ের (মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ) সময় টেমিফস ৪০ লিটার পানির সঙ্গে ৬০ মিলিলিটার ব্যবহার করা হয়। অ্যাডাল্টিসাইডিং (পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন) বা ফগিংয়ে ব্যবহৃত মেলাথিওন ও ডেল্টামাইথিন ডিজেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফগার যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, আমাদের কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের কমিটি বছরে দুই বার বৈঠক করে। ওই বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী ওষুধ নির্ধারণসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে এখন লার্ভিসাইডিং কার্যক্রমে টেমিফস যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে আমরা আপাতত এটি পরিবর্তনের কথা ভাবছি না।
সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই ব্যস্ত। এখন নতুন কোনও প্রযুক্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। তবে পরে উপযুক্ত সময়ে এই প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করবো।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বিটিআই এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা প্রাকৃতিক উপায়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করে। এতে মানুষের ওপর বা পানিতে প্রয়োগ করলে কারও ক্ষতি হয় না।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিটিআই প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী ও টেকসই। এটি মূলত মাইক্রোবায়াল উৎসের একটি নিম্নমাত্রার বিষাক্ত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ব্যাকটেরিয়াটি বড় টক্সিন তৈরি করতে পারে, যা কীট-পতঙ্গের খাওয়া বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে না খেয়েই লার্ভাগুলো মরে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, বড়ি, তরল, গুলি, পাউডার ইত্যাদি নানা ফর্মুলেশনে বিটিআই পাওয়া যায়। রাস্তায়, উন্মুক্ত স্থানে বা বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিসহ পুকুর, নর্দমা, ড্রেন, ডোবা বা যেকোনও স্থানে প্রয়োগ করা যায়। এছাড়া এই ব্যাকটেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি অনুমোদিত।
ডিএসসিসির কীটনাশক নির্বাচন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকায় অনেক দিন ধরেই লার্ভিসাইডিংয়ে টেমিফস ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক দিন ধরে একই ওষুধ ব্যবহারের ফলে মশা এতে সহনশীল হয়ে যায়। তখন এটি পরিবর্তন করে নতুন কিছু প্রয়োগ করা জরুরি।
কবিরুল বাশার বলেন, যে কীটনাশক বেশি কার্যকর, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কম, সে ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করাই উত্তম বলে আমরা মনে করেছি। বিশ্বব্যাপী বিটিআই প্রযুক্তি ব্যবহারে সফলতার বিষয়টি বিবেচনা করে পরীক্ষামূলক এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুপারিশ করেছিলাম। দুটি সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে কেন কার্যকর করা হয়নি আমার জানা নেই।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যে বিটিআই প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ প্রযুক্তি প্রয়োগে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সিঙ্গাপুর থেকে প্রযুক্তিটি এনেছি। এটি এখন বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু করতে পারবো।