ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফরিদগঞ্জে হাসপাতালের আড়ালে চলছে অনৈতিক কাজ শেখ হাসিনা ও রেহানাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় হত্যা মামলা ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে ভোলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ আল-আরাফাহ ঘিরে নতুন পাঁয়তারা রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র তিতু গ্রেফতার আঙুল ফুলে কলাগাছ গোয়াইনঘাটের বুঙ্গড়ী আজিজুল-মাসুক! দুদক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদের পাহাড়  আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ঘনিষ্ঠ দু’জনকে অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগের আয়োজন ১১৭০ টাকার নামজারির খরচ, ভূমি কর্মকর্তা নেন ৮-১৫ হাজার! পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামানের দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ।

দেড় মাসে ১০ খুন : আতঙ্কে দৌলতপুরবাসী

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এখন রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হত্যাকান্ডসহ হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। ফলে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে দৌলতপুরবাসীর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ডের মত নির্মম এবং আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন অভিমত সচেতন মহলের। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত দেড় মাসেরও কম সময়ে দৌলতপুরে অন্তত ১০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার সময় অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়ে কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আবার কেউ দগ্ধ শরীর নিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। দৌলতপুর সীমান্তবর্তী বৃহৎ উপজেলা হওয়ায় এখানকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরাও তাদের জোর তৎপরতা দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে হত্যাকান্ড, হামলা ও সহিংসতা আরো বৃদ্ধি পেত বলেও অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের।

বিভিন্ন ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে গরুতে জমির পাটক্ষেত খাওয়া নিয়ে স্থানীয় এমপি’র ক্যাডার লালচাঁদ বাহিনীর সেকেন্ডে ইন কমান্ড উজ্জল সরদার ও বজলু মালিথার মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে আবারও বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে উজ্জল সরদারের নেতৃত্বে ৪০-৫০জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ঢাল তলোয়ার নিয়ে বজলু মালিথা পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে একে অপরকে আঘাত করা হয়। সংঘর্ষে বজলু মালিথা গ্রুপের বজলু মালিথা ও শরিফুল মালিথা গুলি এবং ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হোন। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন জালাল মালিথা ও মন্টু মালিথা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জোড়া খুনের ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান উজ্জল সরদারকে প্রধান আসামী করে ৩২জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২২-২৫জন অজ্ঞাত হামলাকারীদের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলার এজারহার নামীয় ৬জন আসামি গ্রেফতার হলেও হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি উজ্জল সরদারকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্ত্রাসী উজ্জল সরদারকে ধরতে তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গত ১০জুন শনিবার বিকেলে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পাককোলা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাহমুদুল হাসান ওয়াহিদের ছেলে মামুন এর সাথে আপন চাচা মাহফুজুর রহমান ইরেনের তর্ক বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে মামুন ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠি দিয়ে চাচা মাহফুজুর রহমান ইরেনের (৬৫) মাথায় আঘাত করলে সে মাটিতে লাটিয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গত ২মে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৩ মামলার আসামি জাকির মোল্লা (৪৫) নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির মোল্লা শাহাপুর গ্রামের আরব আলীর ছেলে। একইদিন বিকেলে দৌলতপুরের পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচরের নীচে পদ্মা নদী থেকে ওই যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামের হাজী আসালত মন্ডলের ছেলে এবং সে ২৪ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিল। তাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পদ্মারচরে পুঁতে রাখা হয়।

গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে চিলমারীর চরে রাস্তার জন্য মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার ও খা পক্ষ বনাম মন্ডল পক্ষের মধ্যে চলমান বিরোধের জের ধরে শিকদার ও খা পক্ষের লোকজন সংগবদ্ধ ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে মন্ডল পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় তারা পেট্রোল ঢেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। হামলায় ৬জন আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধসহ ১৬জন আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ ফারুক মন্ডল (২৪), আক্তার মন্ডল (৩৭) ও দিনু মন্ডল (৭০) ৩জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জের ধরে কয়েকদিন পর এক বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে প্রতিপক্ষের লোকজন দাবি করে। নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হলে হত্যাকারীরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিলে আসামিদের বাড়ি ঘরে ব্যাপক লুটতরাজ চলে। কেটে নেওয়া তাদের জমির ফসল।

এছাড়াও উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে নুর সালাম (৩০) নামে এক মানষিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সে একই এলাকার শুকুর মন্ডলের ছেলে। গত ২৪ এপ্রিলে ভোরে প্রতিবন্ধী নুর সালামকে কে বা কারা গলা কেটে গুরুতর আহত করে সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়াতুল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত একই এলাকার আবুল বাসারের ছেলে মাসুম রানাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জোড়া খুনের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, ডবল মার্ডারের ঘটনায় উজ্জল সরদারকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলার এজাহার নামীয় ৬জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। উজ্জল সরদারসহ মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং আসামিও গ্রেফতার হয়েছে। দৌলতপুরের আহান শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দৌলতপুর থানা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদগঞ্জে হাসপাতালের আড়ালে চলছে অনৈতিক কাজ

দেড় মাসে ১০ খুন : আতঙ্কে দৌলতপুরবাসী

আপডেট সময় ০১:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এখন রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হত্যাকান্ডসহ হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। ফলে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে দৌলতপুরবাসীর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ডের মত নির্মম এবং আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন অভিমত সচেতন মহলের। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত দেড় মাসেরও কম সময়ে দৌলতপুরে অন্তত ১০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার সময় অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়ে কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আবার কেউ দগ্ধ শরীর নিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। দৌলতপুর সীমান্তবর্তী বৃহৎ উপজেলা হওয়ায় এখানকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরাও তাদের জোর তৎপরতা দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে হত্যাকান্ড, হামলা ও সহিংসতা আরো বৃদ্ধি পেত বলেও অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের।

বিভিন্ন ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে গরুতে জমির পাটক্ষেত খাওয়া নিয়ে স্থানীয় এমপি’র ক্যাডার লালচাঁদ বাহিনীর সেকেন্ডে ইন কমান্ড উজ্জল সরদার ও বজলু মালিথার মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে আবারও বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে উজ্জল সরদারের নেতৃত্বে ৪০-৫০জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ঢাল তলোয়ার নিয়ে বজলু মালিথা পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে একে অপরকে আঘাত করা হয়। সংঘর্ষে বজলু মালিথা গ্রুপের বজলু মালিথা ও শরিফুল মালিথা গুলি এবং ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হোন। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন জালাল মালিথা ও মন্টু মালিথা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জোড়া খুনের ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান উজ্জল সরদারকে প্রধান আসামী করে ৩২জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২২-২৫জন অজ্ঞাত হামলাকারীদের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলার এজারহার নামীয় ৬জন আসামি গ্রেফতার হলেও হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি উজ্জল সরদারকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্ত্রাসী উজ্জল সরদারকে ধরতে তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গত ১০জুন শনিবার বিকেলে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পাককোলা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাহমুদুল হাসান ওয়াহিদের ছেলে মামুন এর সাথে আপন চাচা মাহফুজুর রহমান ইরেনের তর্ক বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে মামুন ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠি দিয়ে চাচা মাহফুজুর রহমান ইরেনের (৬৫) মাথায় আঘাত করলে সে মাটিতে লাটিয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গত ২মে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৩ মামলার আসামি জাকির মোল্লা (৪৫) নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির মোল্লা শাহাপুর গ্রামের আরব আলীর ছেলে। একইদিন বিকেলে দৌলতপুরের পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচরের নীচে পদ্মা নদী থেকে ওই যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামের হাজী আসালত মন্ডলের ছেলে এবং সে ২৪ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিল। তাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পদ্মারচরে পুঁতে রাখা হয়।

গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে চিলমারীর চরে রাস্তার জন্য মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার ও খা পক্ষ বনাম মন্ডল পক্ষের মধ্যে চলমান বিরোধের জের ধরে শিকদার ও খা পক্ষের লোকজন সংগবদ্ধ ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে মন্ডল পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় তারা পেট্রোল ঢেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। হামলায় ৬জন আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধসহ ১৬জন আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ ফারুক মন্ডল (২৪), আক্তার মন্ডল (৩৭) ও দিনু মন্ডল (৭০) ৩জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জের ধরে কয়েকদিন পর এক বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে প্রতিপক্ষের লোকজন দাবি করে। নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হলে হত্যাকারীরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিলে আসামিদের বাড়ি ঘরে ব্যাপক লুটতরাজ চলে। কেটে নেওয়া তাদের জমির ফসল।

এছাড়াও উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে নুর সালাম (৩০) নামে এক মানষিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সে একই এলাকার শুকুর মন্ডলের ছেলে। গত ২৪ এপ্রিলে ভোরে প্রতিবন্ধী নুর সালামকে কে বা কারা গলা কেটে গুরুতর আহত করে সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়াতুল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত একই এলাকার আবুল বাসারের ছেলে মাসুম রানাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জোড়া খুনের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, ডবল মার্ডারের ঘটনায় উজ্জল সরদারকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলার এজাহার নামীয় ৬জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। উজ্জল সরদারসহ মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং আসামিও গ্রেফতার হয়েছে। দৌলতপুরের আহান শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দৌলতপুর থানা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।