বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সংলাপ বিষয়ক ২য় ফরেন অফিস কনসাল্টেশন (এফওসি) বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা সফররত উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলোয়েভ বাখরমজন জুরাবোয়েভিচ গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন দুদেশের মধ্যে যোগাযোগের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং দুদেশের মধ্যে যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু ছিল তা অচিরেই আবার চালু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় দুদেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনায় কোড শেয়ারিং পদ্ধতি বিষয়েও তাঁরা আলোচনা করেন। বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা – নয়া দিল্লী নিয়মিত ফ্লাইট এবং উজবেক এয়ারের নয়া দিল্লী – তাসকেন্ত নিয়মিত ফ্লাইট দুটোর মধ্যে কোড শেয়ারিং পদ্ধতিতে দুদেশের জনগণ ভ্রমণ করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে চাহিদা বিবেচনা করে ঢাকা – তাসকেন্ত সরাসরি ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন। অচিরেই দু’দেশের মধ্যে এয়ার সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের বিষয়ে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ২০২১ সালে উজবেকিস্তান সফরকালে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের সময় ঢাকায় উজবেকিস্তানের কূটনৈতিক মিশন খোলার বিষয়ে উজবেক রাষ্ট্রপতির ইতিবাচক মনোভাবের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক মিশন খোলার ব্যাপারে সবধরনের সহায়তা দিবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বাস প্রদান করেন।
উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে মোঘল আমল থেকে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক কূটনীতির উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ইরানের চাবাহার বন্দরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে পণ্য পরিবহনে খরচ কম হবে বলে উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন উজবেকিস্তান থেকে তুলা আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অপরদিকে উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উজবেকিস্তান থেকে তুলা আমদানি করে ভ্যালু এডিশনের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন উজবেকিস্তানে যৌথ উদ্যোগে সার কারখানা স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঔষধ শিল্পে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের কথা তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় উজবেকিস্তানও অংশ নিতে পারে। ইতোমধ্যে আফ্রিকার কিছু দেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগে ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
ইমাম বোখারির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশে ইমাম বোখারি বহুল পঠিত। তিনি বাংলাদেশী নাগরিকদের উজবেকিস্তান ভ্রমণ ও ব্যবসায়ীদের উজবেকিস্তানে বাণিজ্যের আগ্রহের কথা জানান। এ বিষয়ে বাংলাদেশী নাগরিকেরা যাতে সহজে ভিসা পেতে পারে সে বিষয়ে তিনি উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ০৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিব্য উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রেরণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে অনুরোধ জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে উজবেকিস্তান থেকে পর্যবেক্ষক প্রেরণের জন্য আহবান জানান।
আমাদের মাতৃভূমি/মাজহারুল