গত ৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের প্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগরীর আরডিএ মার্কেট নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতা, ব্যবসায়ি ও সচেতন ব্যক্তিদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ভীতিকর পরিস্থিতি। এছাড়াও খোদ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রণালয়সহ আমরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন মধ্যে আছি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্নদিক বিবেচনা সাপেক্ষে রাজশাহী মহানগরীর আরডিএ মার্কেটকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস ও ফায়ার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। উক্ত সতর্কমূলক ব্যানারে লিখা ছিল “অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে রাজশাহী আরডিএ মার্কেট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল”।
ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরের বছর অর্থ্যাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
উক্তস্থানে নিরাপদ মার্কেট নির্মাণের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুতের কাজ শুরু করার দায়িত্ব দেয়া হয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) কে। যেটি এখনো প্রক্রিয়াধীন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরডিএ মার্কেটটি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারভুক্ত। তাই এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আরডিএ কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সহোযোগিতা চায় তবে আমার সেটি করতে পারি।
এ বিষয়ে, আরডিএ’র চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কারণে এই মার্কেটটি নিয়ে আমরাও অনেকটা উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছি। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে এখানে। তাই তাদেরকে অন্যত্র কোথাও পূণর্বাসন বা স্থানান্তর না করে সেখানে নিরাপদ কোন বহুতল কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণ করা সম্ভব না। ঈদের পর আমরা পুনর্বাসিত সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও সাধারণ ব্যবসায়িদের সাথে বসে একটি সিদ্ধান্ত নেবো। সিদ্ধান্ত ফলপ্রশু হলে আমরা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবো। শহরের সবচেয়ে বড় এই মার্কেটে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও মার্কেটটিতে সুযোগ-সুবিধা বলতে তেমন কিছুই নেই। উপরন্তু রয়েছে চরম ঝুঁকি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আরডিএ মার্কেটের তিনপাশেই সরু গলি রাস্তা। অথচ আরএস রেকর্ড অনুযায়ী রাস্তাগুলোর প্রস্থ ৩০ ফুট। আশেপাশের ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকেরা দখল করে নেয়ায় রাস্তার প্রস্থ কমে এসেছে। এখনও রাস্তাগুলোর ওপরেই ব্যবসা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সামনের দিকে সাহেববাজার প্রধান সড়ক। সামনের দিকে অল্প একটু ফাঁকা জায়গা রেখে তিনতলা ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছে। আবার সামনের ফাঁকা স্থানের দুই ধারেও রয়েছে ভবন আর দোকাসের ছড়াছড়ি।
এছাড়াও প্রবেশদ্বারে লোহার যে গেটটি বানানো হয়েছে সেটির উচ্চতা এতোটাই কম যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চাইলেও ঐ গেটের কারণে মার্কেটভবনের সামনে প্রবেশকালে স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। মার্কেটের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো কোন রাস্তাও নেই। যার কারনে, অগ্নিকান্ডের মতো ভয়াবহ কোন ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাড়াবে বলে মন্তব্য ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের। ফায়ার সার্ভিস আরো বলছে, আরডিএ মার্কেটে অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মার্কেটের আশপাশে কোনো পুকুর ও বড় কোনো জলাশয়ও নেই। ফলে অগ্নিকান্ড ঘটলে পানির অভাবে আগুন নেভাতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।
এছাড়া মার্কেটটির সিড়ি ও করিডোরগুরোতে মালামাল রেখে চলাচলের রাস্তাকে সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছে। ফলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতেও পারবেন না। তাড়াহুড়ো করে নামতে গেলে অপর্যাপ্ত জায়গার অভাবে ইতিবাচক কোনকিছুর আশা করাটা বৃথা। তাছাড়া মার্কেটের ভেতরে উন্মুক্ত ও এলোমেলোভাবে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার।
এছাড়াও বাইরেও রয়েছে এক ভবন থেকে আরেক ভবনে বৈদ্যুতিক তারের এলোমেলো আর ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ। যেগুলোর ফলে সহজেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। দূর্ঘটনাকালিন সময়ে প্রবেশদ্বারে বৈদ্যুতিক তারের এমন ঝুঁকিপূর্ণবস্থা অগ্নিকান্ড নিবারণে আলাদাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে নিশ্চিত বলে মন্তব্য সচেতন ব্যক্তিদের।
এদিকে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামারুজ্জামান একপ্রশ্নের জবাবে বলেন, আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ি সমিতির চাহিদার প্রেক্ষিতে মার্কেটটির সামনের খোলাস্থানে একটি পানির ট্যাংকি নির্মাণ করা হয়েছে। যেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩২ ফিট, প্রস্ত ২১ ফিট আর গভীরতা প্রায় ১৫ ফিটের মতো। এতো অল্প পরিসরের পানির রিজার্ভ ট্যাংকি দিয়ে কি বিশাল এই মার্কেটের আগুণ নেভানো সম্ভব ? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সত্যি অসম্ভব। কিন্তু প্রাথমিকবস্থায় এটি ফায়ার সার্ভিসের উপকারে আসবে। উল্লেখ্য, মার্কেটটির মালিকানা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। ১৯৮৮
লে এখানে ১৩৭ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দোকান দেয়া হয়। সংস্কারের পর ২০০৬ সালে আবার দোকান বরাদ্দ শুরু হয়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা।