‘কাটার মাস্টার’খ্যাত বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নতুন কেউ নয়। ২০১৬ সাল থেকেই আইপিএলের প্রায় নিয়মিত মুখ মুস্তাফিজ। কয়েকটি দলের জার্সি চাপানোর পর এই টাইগার পেসারর বর্তমানে ঠিকানা দিল্লি ক্যাপিটালস। অবশ্য আগের আসরেও তিনি ওই দলের হয়ে খেলেছেন। তবে এবার টানা তিন ম্যাচে হারলেও, দিল্লির একাদশে এখনও সুযোগ মেলেনি বাঁহাতি পেসার। অথচ অনেকটা তড়িঘড়ি করেই বাংলাদেশ থেকে বিশেষ চার্টার্ড বিমানে দিল্লি মুস্তাফিজকে উড়িয়ে নিয়েছিল।
দু’দিন আগে দেশের মাটিতে টানা দুটি সিরিজ শেষ করেছে টাইগাররা। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজই স্বাগতিকদের জন্য বেশকিছু সুখস্মৃতি নিয়ে এসেছে। তবে সদ্য সমাপ্ত আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য আইপিএলের এবারের আসরে প্রথম থেকে মুস্তাফিজদের খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। টাইগারদের সাদা পোশাকের দলে এই পেসার না থাকায় অবশ্য সেই মেঘ কেটে যায়। তাই আইরিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হওয়ার দিনই (১ এপ্রিল) মুস্তাফিজকে নিয়ে যায় দিল্লি।
এরপর সেদিনই দলটি প্রথম ম্যাচে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের মুখোমুখি হয়। তবে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে দেখা দেয় চমক। তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া মুস্তাফিজকে যে একাদশেই রাখা হয়নি। সেই ম্যাচে ৫০ রানে হেরে যায় ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বাধীন দিল্লি। পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুস্তাফিজের দল গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে নামে। ওই ম্যাচে তিন বিদেশি ব্যাটারকে নিয়ে একাদশ সাজান ওয়ার্নাররা। তবে সেই ম্যাচের একাদশেও উপেক্ষিত থাকেন মুস্তাফিজ। বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবে দলে রাখা হয় প্রোটিয়া পেসার এনরিখ নরকিয়াকে। তিনি দুই উইকেট পেলেও নির্ধারিত ৪ ওভারে তিনি ৩৯ রান দেন। ফলে দলও হেরে যায় ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
তবে দিল্লি ক্যাপিটালসের মূল নাটকীয় আচরণ ছিল তাদের তৃতীয় ম্যাচের আগে। শনিবার (৮ এপ্রিল) মাঠে নামার আগে দলটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট করা হয়। যেখানে মুস্তাফিজের ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘প্রপার ম্যাচ ডে ভাইবস ফিচার ফিজি।’ এর মাধ্যমে সেদিন রাতে রাজস্থানের বিপক্ষে দলে মুস্তাফিজের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য না ছিল না। তবে বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে ফিজ খেলবেন- এমন আশা তৈরি হয়েছিল। অথচ একাদশ ঘোষণার পর দেখা যায় সেই ম্যাচেও নেই মুস্তাফিজের নাম। কেবল একাদশই নয়, মুস্তাফিজ যে তাদের আপাত পরিকল্পনাতেও নেই সেটি বোঝা যায় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের তালিকাতেও ফিজ না থাকায়।
দিল্লির এমন আচরণে বেশ ক্ষুব্ধ বাংলাদেশি সমর্থকরা। মুস্তাফিজকে নিয়ে দেওয়া দিল্লির ওই পোস্টে সমর্থকদের হতাশা ও ক্ষোভের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সেখানে দিল্লি বাংলাদেশি দর্শকদের ‘আবেগ নিয়ে খেলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। একজনের কমেন্ট ছিল এরকম, ‘দিল্লি ক্যাপিটাল বি লাইক: পেইজের রিচ বাড়ানো দরকার। যাই মুস্তাফিজের একটা পিক আপলোড দিয়ে আসি!’
এক সমর্থকের মন্তব্য, ‘দিল্লি ক্যাপিটাল বি লাইক : পেইজের রিচ বাড়ানো দরকার। যাই মুস্তাফিজের একটা পিক আপলোড দিয়ে আসি!’
আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর এমন আচরণ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বাংলাদেশি দর্শকদের সামাজিক মাধ্যমে উন্মাদনাকে কাজে লাগানোর নজির দেখা গেছে। তাই অনেক দর্শকের অভিমত, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের খেলায় নেওয়ার চেয়ে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর রিচ বাড়ানো এবং তাদের টিআরপি বৃদ্ধিতেই বেশি মনোযোগ। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশি ফ্যানবেজ কাজে লাগিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে!
অবশ্য এটিও সত্য, একাদশে জায়গা পেতে মুস্তাফিজকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে এনরিখ নরকিয়ার সঙ্গে। কেবল তিনিই নন, বিদেশি কোটায় খেলা প্রত্যেকেই দলে সুযোগ পেতে একে অপরের প্রতিযোগী। তবে এখন পর্যন্ত তাদের একাদশে সুযোগ পেয়েছেন নরকিয়া ডেভিড ওয়ার্নার, রাইলি রুশো ও রোভমান পাওয়েল। দিল্লির সর্বশেষ হারের ম্যাচে নরকিয়া ৪ ওভার বল করে ৪৪ রান দিয়েছেন, ছিলেন উইকেটহীনও। সেই ম্যাচে দিল্লিকে ৫৭ রানে হারায় রাজস্থান। দলের এই করুণ দশা কাটানোর লক্ষ্যে দিল্লি আগামী ১১ এপ্রিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মুখোমুখি হবে।