অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সোমবার (৩ এপ্রিল) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৩ : জীবনব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ শীর্ষক উচ্চ-পর্যায়ের সভায় দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বিশ্বে ৭৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ অটিজমে আক্রান্ত। এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে সর্বাধিক কাজে লাগাতে পারে এবং আমাদের সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য সম্মিলিতিভাবে কাজ করে যাওয়ার নিমিত্তে আজ আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। এ লক্ষ্যে আমি সবাইকে বিভিন্ন উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আসার জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশে গত এক দশকে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য আমি বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যাবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদকে। যিনি এই প্রচেষ্টার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মহতি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ ও নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩ প্রণয়ন; সারা দেশজুড়ে ১০০টিরও বেশি অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার কেন্দ্র স্থাপন এবং এসকল কেন্দ্রে কর্মরত কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমাদের জাতীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমরা জাতিসংঘেও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। সাধারণ পরিষদে এ সংক্রান্ত রেজুল্যুশন গ্রহণে আমরা গভীরভাবে কাজ করেছি। ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপনে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে অন্যতম সহ-পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করে থাকি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয় তা মোকাবিলার জন্য দ্বিতীয় গ্লোবাল ডিসএবিলিটি সামিট ২০২২ এর সময় আমরা আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি।
বাংলাদেশ, কাতার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আলেয়া আহমেদ সাইফ আল-থানি এবং বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ আব্দুল মুহিত।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তার কথা উল্লেখ করেন এবং এসব সমস্যা সমাধানে আশু হস্তক্ষেপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, সৃজনশীল অভিব্যক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিউইয়র্ক অফিসের পরিচালক ওয়ার্নার ওবারমেয়ার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং এতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি, অন্যান্য পর্যায়ের কূটনীতিক, জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং মিডিয়া ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রসচিব জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তি বিনির্মাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি এ ডিকার্লো, ইউএন উইমেন-এর নির্বাহী পরিচালক সিমা সামি বাহাউস এবং রাজনীতি বিষয়ক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ খিয়ারি, জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল নেতা বিজন উলফ কু-এর সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
এসব বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব তাদেরকে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইস্যুতে জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের বিষয়ে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রসচিব রোহিঙ্গাদেরকে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করেন।
প্রত্যেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে এ সকল বিষয়ে আগামী দিনগুলোতে কাজ করার আশ্বাস প্রদান করেন।