প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র হবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে, এটাই আমার চাওয়া। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব ইনশাল্লাহ।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগই পারে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আজ এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। তাই পিতাকে (জাতির পিতা) বলতে পারি, পিতা কথা দিলাম আপনার জনগণ কখনো অভুক্ত থাকবে না, আপনার জনগণ কষ্টে থাকবে না। আপনি আজ নেই, আপনার আদর্শ আছে। আওয়ামী লীগ মানুষকে সুন্দর জীবন দেবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, আমরা সেভাবেই এই দেশ পরিচালনা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যেতে যার যতটুকু জমি আছে তাতে চাষাবাদ করুন, খাদ্য উৎপাদন করুন। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে, আমাদেরটা আমরাই খাব, অন্যদের ওপর যেন নির্ভর করতে না হয়। জাতির পিতা বলেছেন, ‘আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, তা দিয়েই দেশ গড়বো’। আমরাও সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব ধরনের দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, এটাই আওয়ামী লীগ, এটাই আওয়ামী লীগের শিক্ষা।
করোনাকালের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিডকালীন সময়ে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। নগদ অর্থ সহযোগিতা দিয়েছি প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে। রপ্তানি শিল্পকে বিশেষ প্রণোদনের আওতায় এনেছি। আমাদের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজে সাত কোটি ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯১ জন প্রণোদনা পেয়েছে। দুই লাখ ১৬ হাজার ৬৭টি প্রতিষ্ঠান এর সুবিধা পেয়েছে। ৩৩৩ নম্বরে কল করলে ঘরে খাবার পৌঁছে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২ শতাংশে উন্নিত করতে পেরেছি। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা, বিনামূল্যে বই, শিক্ষার মান যেন ভালো হয়, দক্ষ জনশক্তি যেন তৈরি হয় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি উপজেলায় সরকারি স্কুল কলেজ স্থাপন করেছি। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ আমরা করে দিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ সালে করার কথা ছিল, আমরা সেটা করতে পেরেছি। প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার, ব্রডব্যান্ড স্থাপন করা হবে। এরইমধ্যে প্রায় ২৬০০ ইউনিয়নে, ১০০০ থানায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে পেরেছি। গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত আমরা কানেকটিভিটি নিয়ে যাব। ১৮ কোটি ১৭ লাখ মোবাইল সিম আমাদের ব্যবহার হয়। প্রায় ১২ কোটি ৬২ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টার সেবা দিচ্ছে, ৫৫০০ ডাকঘরকে আমরা ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করেছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যে আওয়াজ আমরা শুনতে পাচ্ছি তার উপযুক্ত দক্ষ জনশক্তি যেন আমাদের গড়ে ওঠে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমরা আয়োজন করছি।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে তার জন্য কী কী করণীয় সেগুলো আমরা করে যাচ্ছি। এমন একটি বাংলাদেশ হবে যেখানে সবাই স্মার্ট হবে। তারা সবকিছু অনলাইনে করতে শিখবে। অনলাইনের ব্যবহার করতে পারবে। আমাদের ইকোনোমি সেটাও হবে ই-ইকোনমি। স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ যেন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে হয়। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবকিছুই হবে স্মার্ট। এভাবে আমদের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। আমরা আশা করি ২০৪১ সালের মধ্যে তা করতে সক্ষম হব। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যত বেশি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার শিখবে, তত দ্রুত আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।