ঢাকা ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোট দারোগার হাট বাজার এলাকায় উল্টো পথে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ বোরহানউদ্দিনে পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাফর মৃধা’র বসতবাড়িতে হামলা। বনানীর আবাসিক হোটেলে মিলল ৯৮৪ বোতল বিদেশি মদ গাজীপুর কাস্টমসের পিওন কাওসারের কোটি টাকার সম্পত্তি পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

অবৈধ করাতকলের থাবায় নিধন বনাঞ্চল, নির্বিকার বনবিভাগ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় অবৈধ ভাবেই চলছে প্রায় শতাধিক করাতকল। সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর এভাবে চলে আসলেও নির্বিকার বনবিভাগ। ফলে করাতকলের থাবায় নিধন হচ্ছে বনজ, ফলজ, ওষুধি সহ নানা প্রজাতির গাছ এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য,আর বিলুপ্ত প্রায় পশু পাখির অভয়ারণ্য বাসস্থান।

১লা ডিসেম্বর (বৃহঃবার) সরেজমিনে তদন্তে জানাযায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বনাঞ্চলের আশপাশে অবৈধভাবে এসব করাতকল স্থাপন করা হলেও তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছেন সমিল মালিকদের কাছ থেকে।

সংরক্ষিত বনের ভিতর বা আশেপাশে করাতকল স্থাপনের নিয়ম না থাকা সত্যেও উপজেলার হবিরবাড়ী বিড, কাদিগড় বিড, আখালিয়া বিড, উথুরা বিড, ও হাজির বাজার বিডে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ করাতকল। করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত কোনো করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনা করতে পারবেন না।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বনের মধ্যে এই করাতকল স্থাপনের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিল মালিকরা সরকারি কোন নিয়ম মানছেন না। অনেকেই বছরের পর বছর অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন অবৈধ স’মিল। তার মধ্যে ভালুকা পৌরসভায় ২৭ টির মধ্যে অনুমোদন আছে ১২ টি বাকি গুলি চালাচ্ছে অবৈধভাবে প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার হবিড়বাড়ি রেঞ্জের অধীনে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করেন সাইফুল ইসলাম, সোহাগ মিয়া, মাস্টার বাড়ীতে রহিম মিয়া, বাটাজোর বাজারের পাশেই সেলিম তালুকদার, ফারুক,পাপন, জাহাঙ্গীর শাহজাহান সহ আরো অনেকেই। এসব কলে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে বনাঞ্চলের অসংখ্য চোরাই কাঠ। এগুলো সহ সর্বমোট ৭৮টির অধিক অবৈধ সমিল রয়েছে।

এদিকে উথুরা রেঞ্জের নাকের ডগায় দিন রাত দেদারসে বনজ গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চেড়াই করছেন নূর ইসলাম। তাছাড়াও ডাকাতিয়া আড়াইপাড়া আব্দুল হাই নামে এক নেতা দুটি অবৈধ কলের মালিক সে একা নিজেই। এছাড়াও মল্লিকবাড়ি বাজারের সাথেই শামসুল হক কারি, মাইন উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, শাহবুদ্দিন, জাকির হোসেনসহ এ রেঞ্জের অধীনে আরো অনেক করাতকল রয়েছে। যেগুলো বন বিভাগের চোখে পড়ে না। এসব স’মিল গুলোর একটিরও বন পরিবেশের বৈধ কাগজপত্র (লাইসেন্স) নেই।

সবই স্থানীয় বিটে মাসোহারা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে চালিয়ে আসছে মিল মালিকরা। অবৈধ করাতকলের জন্য বনাঞ্চলের কোন গাছপালা রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। করাতকল বিধিমালা, ২০১২-এ বলা আছে, জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। তবে এই নিদের্শনা কেউ মানছে না। যত্রতত্র বসানো হয়েছে করাতকল।

দিনে রাতে প্রকাশ্যে চেড়াই করা হচ্ছে গজারি,সেগুনসহ বিভিন্ন ফলজ প্রজাতির গাছ।এ যেন বনাঞ্চল ধ্বংসের হিড়িক পড়ে গেছে ‌‌। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, তাঁরা উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ইউএনও,থানাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। জনবল সংকট থাকায় বনাঞ্চল ও বনভূমি রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যথেষ্ট আর্মস না থাকার কারনটাও ইস্যু করেন তিনি। কবে কখন এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হবে,আদৌ হবে কি না এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকেই।

বছরের পর বছর ধরে এসব চলতে থাকলে ও কোন মাথা ব্যাথা নেই বন কর্মকর্তাদের। শুধুমাত্র লোক দেখানো দু-একটা অভিযান চালিয়ে ফরমালিটি রক্ষা করা তাছাড়া আর কিছু না।দ্রুত এসব অবৈধ স’মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে অচিরেই ভালুকার বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা

অবৈধ করাতকলের থাবায় নিধন বনাঞ্চল, নির্বিকার বনবিভাগ

আপডেট সময় ০২:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় অবৈধ ভাবেই চলছে প্রায় শতাধিক করাতকল। সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর এভাবে চলে আসলেও নির্বিকার বনবিভাগ। ফলে করাতকলের থাবায় নিধন হচ্ছে বনজ, ফলজ, ওষুধি সহ নানা প্রজাতির গাছ এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য,আর বিলুপ্ত প্রায় পশু পাখির অভয়ারণ্য বাসস্থান।

১লা ডিসেম্বর (বৃহঃবার) সরেজমিনে তদন্তে জানাযায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বনাঞ্চলের আশপাশে অবৈধভাবে এসব করাতকল স্থাপন করা হলেও তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছেন সমিল মালিকদের কাছ থেকে।

সংরক্ষিত বনের ভিতর বা আশেপাশে করাতকল স্থাপনের নিয়ম না থাকা সত্যেও উপজেলার হবিরবাড়ী বিড, কাদিগড় বিড, আখালিয়া বিড, উথুরা বিড, ও হাজির বাজার বিডে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ করাতকল। করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত কোনো করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনা করতে পারবেন না।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বনের মধ্যে এই করাতকল স্থাপনের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিল মালিকরা সরকারি কোন নিয়ম মানছেন না। অনেকেই বছরের পর বছর অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন অবৈধ স’মিল। তার মধ্যে ভালুকা পৌরসভায় ২৭ টির মধ্যে অনুমোদন আছে ১২ টি বাকি গুলি চালাচ্ছে অবৈধভাবে প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার হবিড়বাড়ি রেঞ্জের অধীনে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করেন সাইফুল ইসলাম, সোহাগ মিয়া, মাস্টার বাড়ীতে রহিম মিয়া, বাটাজোর বাজারের পাশেই সেলিম তালুকদার, ফারুক,পাপন, জাহাঙ্গীর শাহজাহান সহ আরো অনেকেই। এসব কলে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে বনাঞ্চলের অসংখ্য চোরাই কাঠ। এগুলো সহ সর্বমোট ৭৮টির অধিক অবৈধ সমিল রয়েছে।

এদিকে উথুরা রেঞ্জের নাকের ডগায় দিন রাত দেদারসে বনজ গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চেড়াই করছেন নূর ইসলাম। তাছাড়াও ডাকাতিয়া আড়াইপাড়া আব্দুল হাই নামে এক নেতা দুটি অবৈধ কলের মালিক সে একা নিজেই। এছাড়াও মল্লিকবাড়ি বাজারের সাথেই শামসুল হক কারি, মাইন উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, শাহবুদ্দিন, জাকির হোসেনসহ এ রেঞ্জের অধীনে আরো অনেক করাতকল রয়েছে। যেগুলো বন বিভাগের চোখে পড়ে না। এসব স’মিল গুলোর একটিরও বন পরিবেশের বৈধ কাগজপত্র (লাইসেন্স) নেই।

সবই স্থানীয় বিটে মাসোহারা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে চালিয়ে আসছে মিল মালিকরা। অবৈধ করাতকলের জন্য বনাঞ্চলের কোন গাছপালা রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। করাতকল বিধিমালা, ২০১২-এ বলা আছে, জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। তবে এই নিদের্শনা কেউ মানছে না। যত্রতত্র বসানো হয়েছে করাতকল।

দিনে রাতে প্রকাশ্যে চেড়াই করা হচ্ছে গজারি,সেগুনসহ বিভিন্ন ফলজ প্রজাতির গাছ।এ যেন বনাঞ্চল ধ্বংসের হিড়িক পড়ে গেছে ‌‌। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, তাঁরা উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ইউএনও,থানাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। জনবল সংকট থাকায় বনাঞ্চল ও বনভূমি রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যথেষ্ট আর্মস না থাকার কারনটাও ইস্যু করেন তিনি। কবে কখন এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হবে,আদৌ হবে কি না এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকেই।

বছরের পর বছর ধরে এসব চলতে থাকলে ও কোন মাথা ব্যাথা নেই বন কর্মকর্তাদের। শুধুমাত্র লোক দেখানো দু-একটা অভিযান চালিয়ে ফরমালিটি রক্ষা করা তাছাড়া আর কিছু না।দ্রুত এসব অবৈধ স’মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে অচিরেই ভালুকার বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।