অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় প্রায় চারশ কোটি টাকার মোট সাত প্রকল্প বাতিল করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। বাতিল এসব প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজশাহী সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন মেগা প্রকল্পের অধীন এসব প্যাকেজ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। কয়েকদিন আগে রাসিকের নতুন প্রশাসক প্রকল্পগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এসব প্রকল্পের টাকা বদলে অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যয় করা হবে বলেও রাসিকের চিঠিতে বলা হয়েছে।
রাসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্পের অধীনে রেলক্রসিংয়ের ওপর কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। কয়েকটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল। দরপত্র হওয়া পাঁচটির মধ্যে চারটি ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছিল বছরখানেক আগে। ভদ্রা রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভারের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় সেটি বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় নয় বিবেচনায় বাতিল হচ্ছে ১১৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যয়ে নগরের কোর্ট স্টেশন রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা। নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার না করে আন্ডারপাস করার জন্য ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় নেওয়া প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। নিউমার্কেট-রেলগেট ফ্লাইওভারটির কাজ বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হলেও সেটির নকশায় আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এ ফ্লাইওভারের কাজে কাটছাঁট হবে না।
সূত্রমতে, প্রায় ৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর হড়গ্রাম কাঁচাবাজার নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণের পর থেকেই এলাকাবাসী আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। প্রকল্পটিকে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় রাসিকের বর্তমান পরিষদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার বদলের পর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন নগরের কাদিরগঞ্জে তার বাবা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিস্থলে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে।
এ প্রকল্পটিও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। নগরের সিটিহাট সড়কসংলগ্ন এলাকায় ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকায় শেখ জামাল কনভেনশন হল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। এছাড়া ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ও নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল। এই প্রকল্পটিও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে আরও চারটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ইতোমধ্যে নির্মাণ হয়ে যাওয়া ফুটওভারব্রিজগুলো কোনো কাজেই আসছে না দেখে এগুলো নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে সিটি করপোরেশন। সবমিলিয়ে ৩৯৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার সাতটি প্রকল্পের কাজ বাতিল করার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার অতিরিক্ত সচিব ড. দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বড় বড় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে নগরীর মানুষের আপত্তি ছিল। এসব প্রকল্পের টাকায় নগরীজুড়ে ছোট ছোট অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘জনমুখী নয় এমন কাজগুলো প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখানে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হবে। বিশেষ করে কোথাও কোথাও রাস্তাঘাট মেরামত করা দরকার, কোথাও উঁচু করা দরকার, কোথাও আবর্জনা দেখা যাচ্ছে। সেগুলো ঠিকঠাক করা দরকার। ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করা দরকার।