বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের নির্বাচিত আমীর হিসেবে ২০২৫—২০২৬ কার্যকালের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।
নগর জামায়াতের দেওয়ানজি পুকুর লেনস্থ কার্যালয়ে নগর জামায়াতের মজলিশে শূরার এক বিশেষ অধিবেশন ও শপথ অনুষ্ঠান সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। তিনি নগর আমীর হিসেবে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দায়িত্ব আসার পর আল্লাহকে ভয় করে এবং তা পালনের জন্য পেরেশান থাকে। সংগঠনের সদস্যদের দায়িত্ব হল তার জন্য দোয়া ও প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা।
তিনি আরও বলেন, সংগঠনের সকল রুকন ও দায়িত্বশীলদের সংগঠন সম্প্রসারণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর আফসার উদ্দিন চৌধুরী, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জামান হেলালী, নগর মজলিসে শুরার সদস্য ড. অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়্যেদ আবু নোমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. এ কে এম ফজলুল হক, ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আবু বকর, মাওলানা জাকের হোসাইন, আমির হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, মাহমুদুল আলম প্রমুখ।
জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ৬ এপ্রিল সাতকানিয়ার ছমদর পাড়ায় একটি ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মরহুম ওবায়দুর রহমান চৌধুরী ও মরহুমা ছমুদা বেগম দম্পতির জেষ্ঠ্য সন্তান তিনি। ৬ ভাই—বোনের মধ্যে আলহাজ্ব শাহাজাহান চৌধুরী সবার বড়। তাঁর সহধর্মিনী জোহরা বেগম গৃহিনী। তিনি তিন মেয়ের জনক এবং সকলেই বিবাহিতা।
আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বার বার কারা নির্যাতিত নেতা। তিনি প্রায় নয় বছর জেল খেটেছেন। সর্বশেষ তিনি ৩৩ মাস জেল খেটে বের হয়েছেন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। কারাগারে থাকাকালীন তিনি তাঁর মমতাময়ী মাকে হারিয়েছেন। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বার বার মিথ্যা মামলা, পুলিশি নির্যাতন ও নির্দয় আচরণের শিকার হন।
২০০০ সালে পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ম্যান্ডেটবিহিন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তাঁকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক মাস আটক রেখে তাঁকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। মাননীয় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে কারাগারের গেইট থেকে পুনঃ গ্রেফতার করা হয়।
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে সাতকানিয়া—লোহাগাড়া আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য পদে জামায়াতের নমিনি ছিলেন। লগি—বৈঠার তাণ্ডবে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন—ফখরুদ্দিন সরকার। সে সময় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় তিনি দীর্ঘ ১৪ মাস কারাগারে আটক ছিলেন। ১/১১ অসাংবিধানিক সরকারের সাথে আঁতাত করে ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক পরিসংখানের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে হাইকোর্ট চত্ত্বর থেকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখে। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে তিনি ২০১২ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
সর্বশেষ তিনি নিজ বাড়ি থেকে ঈদুল ফিতরের পূর্ব রাতে (১৪ মে ২০২১ তারিখ দিবাগত রাত) গ্রেফতার হয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পেয়েও জালিম সরকারের রোষানলে পড়েছেন। জেলগেট থেকে পুনঃ পুনঃ গ্রেফতার হন তিনি। অন্যায়ভাবে পর পর ৫ বার জেল গেট থেকে গ্রেফতার ও আইনি প্রক্রিয়ায় অবশেষে ৩৩ মাস পর মুক্তি পেয়েছিলেন ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে এবং এর পনের দিন পর বিগত ২ ফেব্রুয়ারি জুমাবার চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর নির্বাচিত হয়ে শপথ নিয়েছিলেন। আজ নতুনভাবে ২০২৫—২৬ কার্যকালের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরী আমীরের শপথ নিলেন তিনি।
উল্লেখ্য যে, জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী ৩৫ বছর বয়সেই প্রথম বার এমপি নির্বাচিত হন ১৯৯১ সালে। পরবর্তীকালে আবারো এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০১ সালে। তিনি জামায়াত সংসদীয় দলের হুইপ ছিলেন ১৯৯১—১৯৯৬ সংসদে। ২০০১—২০০৬ সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। গণমুখী নেতৃত্বে তিনি নজির স্থাপন করেছেন।