আমি একা চাল চুরি করিনি। আমার সঙ্গে বিএনপির আরো কয়েকজন নেতাকর্মী জড়িত আছে বলেন অভিযুক্ত মুক্তার ফরাজি।
ভোলার চরফ্যাশনে জেলেদের পুর্নবাসনের ৩৫ বস্তা চাল চুরির অভিযোগে যুবদল নেতা মো. মুক্তার ফরাজিকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) রাতে উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ চাল চুরির ঘটনায় দায়ে পরদিন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
দক্ষিণ আইচা থানা যুবদল সভাপতি মো. ইকবাল হাওলাদার বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তার ফরাজি ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শনিবার রাতে ৩৫ বস্তা জেলেদের পুর্নবাসনের চাল চুরি করে ট্রলারে তুলে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে চালের বস্তাগুলো জব্দ করে। এসময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অভিযুক্ত মুক্তার ছিটকে পড়েন।
প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। সে কারণে মুক্তার ফরাজিকে ঢালচর ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুক্তার ফরাজি ঢাকা বলেন, চাল চুরির সঙ্গে আমি একা জড়িত না। ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক কাসেম মেম্বার, সহ-সভাপতি মনির বেপারি, বশার মিয়া এবং জসিম পাটোয়ারীসহ আরো কয়েকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু, রাজনৈতিক কারনে এ ঘটনার সঙ্গে শুধুমাত্র আমাকে জড়ানো হচ্ছে।
ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন আমি ঢালচর ছিলাম না। আমার মা ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছিল। সেজন্য ঘটনার দিন আমি ঢাকা ছিলাম। গতকাল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আমি ঘটনাটি শুনেছি।
তিনি বলেন, ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদটি টিনসেডের। ঘটনার সময় পরিষদে দুইজন চৌকিদার ছিল। মুক্তার ফরাজি রাতে পরিষদে গিয়ে চৌকিদার দুইজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩৫ বস্তা চাল চুরি করে নিয়ে যায়। পরিষদের পেছনে একটি খাল রয়েছে। সেই খালে একটি ট্রলার রাখা ছিল। চালের বস্তাগুলো পরিষদ থেকে চুরি করে ট্রলারে উঠানোর পর স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে যায়। পরে চালের বস্তাগুলো ট্রলারে রেখে মুক্তার পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে ট্যাগ অফিসার খবর পেয়ে চালের বস্তাগুলো উদ্ধার করে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, মুক্তার ফরাজির একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব না। এ ঘটনার সঙ্গে নিশ্চয়ই বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারে।
জানতে চাইলে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক বলেন, এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপুকে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপুর কাছে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসংক্রান্ত কোনো চিঠি পাইনি। তাই এ বিষয়ে কোনোকিছুই বলতে পারছি না।
উল্লেখ্য যে, গত ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে মা ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুদ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য ২৫ কেজি (জনপ্রতি) করে চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ঢালচর ইউনিয়নে ২১৫০ জন নিবন্ধিত জেলেরমধ্যে ১২২১ জন জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য চাল বরাদ্ধ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
শুক্রবার ২৫ অক্টোবর প্রায় ২৮ টন চাল জেলেদের মাঝে বিতরণ করার জন্য ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছিল। শনিবার রাতে মুক্তার ফরাজি সেখান থেকে ৩৫ বস্তা চাল চুরি করে।