শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনায় আমলা তথা সচিবরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। বিশেষত: গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বরাবরই স্বৈরাচার সরকারের বিশ্বস্ত সচিবদের উন্নততর পদায়ন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেকের মত স্বৈরাচার সরকারের মদতপুষ্ট হয়ে হাসিনা সরকারের আনুকুল্য পাওয়ার জন্য নানারকম ভাবে তাদের জীবন বৃত্তান্ত দাখিল করেন। এদের মধ্যে বর্তমানে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির যুগ্ম সচিব আবুল কালাম আজাদ অন্যতম। এসবের ধারাবাহিকতায় এখনো উপদেষ্টাদের পাশ কাটিয়ে সচিবদের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে বিকল্প সরকার। এদের অনেকেই পেয়েছেন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ততার পুরস্কার। পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এর বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) আবুল কালাম আজাদ , পটুয়াখালী জেলার দুমকিতে জন্ম নেয়া সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা তার জীবনবৃত্তান্তে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের একজন সরাসরি কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার জীবন বৃত্তান্তে উল্লেখ আছে, ছাত্র জীবনে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার একজন সদস্য ছিলেন । সেখানে তার পদ ছিল সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক । পাশাপাশি ছিলেন এজিএস, বুয়েট কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশন, বুয়েট। ইউকসু নির্বাচনে জাহিদ-খালেদ-তুহিন পরিষদে এজিএস (তুহিন) হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট এর সহ-সভাপতি।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে তার জীবনবৃত্তান্ত ও কর্মকান্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাজানো ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে জামাত-শিবির ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন করেন এবং সেই আন্দোলনে অনেক জামাত-শিবিরের নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠান।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিশ্বস্ততার পুরস্কারপ্রাপ্ত পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালে বিএনপি-জামাতের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে নিয়োজিত থেকে বিএনপি-জামাত নেতা কর্মীদের নির্যাতন করে আওয়ামী সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটেছে। ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়ার পর প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে পারেননি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সচিবদের সরানো হলেও বেশিরভাগ আওয়ামী সচিবই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। দেশের পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ বিভাগে এমন একজন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলার নিয়ন্ত্রণে থাকলে যেকোন সময়ে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি অন্যতম।
দেশের জরুরি সেবায় শেখ হাসিনার মদ্য পুষ্ট এমন একজন আমলা বহাল তবিয়তে আছে জানতে পেরে দেশের শীর্ষ সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অনেকেরই অভিমত, দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জরুরি সেবা খাতে আবুল কালাম আজাদের মত আমলাদের নিয়ন্ত্রণ থাকলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় যেকোন সময়ে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখিত শেখ হাসিনার মদনপুষ্ট হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।