ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজশাহীতে ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ীর সাথে মটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক যুবকের-মৃত্যু কুমিল্লা মিডিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ১৬-তম আসরের উদ্বোধন তারেক রহমানের নেতৃত্বেই নিরাপদ আগামীর বাংলাদেশ: যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না জুলুম-অন্যায়কে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না নাগেশ্বরীতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ পছন্দের বিয়ের বিপক্ষে অধিকাংশ পাকিস্তানি সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাহজালাল বিমানবন্দরে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ গ্রেফতার জেলা গোয়েন্দা শাখা, পাবনার অভিযানে ০৩(তিন) কেজি গাঁজা সহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার।

পদ্মা সেতুর এক বছর: পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে উদ্বোধন করা হয়। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলেও ২৬ জুন থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতু একটি আকাঙ্খা, একটি স্বপ্নের নাম। বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সাহস। পদ্মা সেতু দেশের গর্ব। পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মুখের হাসি।
২০২২ এর ২৫শে জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর, ২৬ শে জুন জনসাধারণ জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে সাবলীল হয়েছে গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ। খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে।
আগের মতো আর ফেরিঘাটে অসহনীয় ভোগান্তি নেই। কাজ শেষ হলে ফেরি ধরার তাড়াও নেই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু।
রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় একবছর আগে যেতে পার হতে হতো ফেরি। দুই ঈদে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজট লেগেই থাকতো, এতে প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হতো জনসাধারণকে।
বিপদ ছিল শীতেও, ঘন কুয়াশায় সারারাত বন্ধ থাকতো ফেরি। এছাড়া বর্ষায় ছিল লঞ্চ দুর্ঘটনার শঙ্কা।
সব শঙ্কা আর দুর্ঘটনার পথ মাড়িয়ে পদ্মা সেতু চালুর পর বৃহত্তর যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল আর ফরিদপুরের ২১ জেলার মানুষ ১ থেকে ৪ ঘণ্টার পৌঁছে যাচ্ছেন রাজধানীর বুকে।
জানা গেছে, কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে অবস্থান করছে দেশের শীর্ষ অবকাঠামো পদ্মা সেতু। সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন থেকে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি সেতু এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পুরো সেতু এলাকায় সেনা সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।
সেতুর ওপরে এবং নিচে উভয় স্থানেই এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। সেতুর ওপরে ও নিচে, নদী এবং এর আশপাশের সড়ক, সড়কের বাইরেও বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি টিভি) ক্যামেরা।
উল্লেখ্য, ফেরি সংকটে অথবা আবহাওয়াজনিত জটিলতা, অথবা যানজটে পড়ে পদ্মা নদী পার হতে না পেরে তরমুজ বোঝাই শতাধিক গাড়ি আটকে পড়ার কাহিনী কারও অজানা নয়। শুধু তরমুজই নয়, মাদারীপুর থেকে আনা কলাই শাক, শরীয়তপুর থেকে আনা নানা ধরনের সবজি, ফরিদপুর থেকে আনা খেজুরের রস, বরিশাল ও  পটুয়াখালী থেকে আনা তরমুজ, বাঙ্গি, আমড়া ও মুরগির ডিমবাহী ট্রাকও পদ্মার পাড়ে আটকে থাকতো, ঘণ্টা পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। ফলে এসব পচনশীল পণ্য গরমে নষ্ট হয়ে যেতো। যা ফেলে দিতে বাধ্য হতেন ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ এসব পণ্য কম দামে বিক্রি করে দিয়ে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে বাড়ি ফিরতেন খালি হাতে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমন পরিস্থিতির অবসান হয়েছে বলে স্বস্তিতে আছেন পদ্মারের কৃষিজীবী মানুষের।
তারা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগে সেই অবস্থা আর নেই। এপারের ২১ জেলার কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বাড়ছে চাষাবাদ। বাড়ছে কৃষিনির্ভর খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন। জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হচ্ছে সেসব কৃষিপণ্যের চাষাবাদ। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সহজ হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ক্রেতাও মিলছে আগের তুলনায় বেশি। চুক্তি ভঙ্গ হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনে সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভাঙ্গা এলাকার কৃষক সত্তার মাদবর জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে বিভিন্ন পণ্য ঢাকায় পাঠাতে সময় লাগত ৮-১০ ঘণ্টা। ফেরি পারাপারে দেরি হওয়ার কারণে অনেক সময় নষ্ট হতো মূল্যবান এসব কৃষিপণ্য। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসান গুণতে হতো কৃষকদেরও। কৃষকরা দাম পেতেন কম। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষিপণ্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
আগে যেখানে ঢাকায় কোনো কাজ করতে গেলে যাওয়া-আসা মিলিয়ে সময় লাগতো তিনদিন, সেখানে এখন ভোরে ঢাকায় রওয়ানা দিয়ে দিনের কাজ শেষ করে সন্ধ্যার গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশ্যে পথ দেওয়া যায়।
আর রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের কিংবা প্রিয়তমা স্ত্রীর রান্না খেতে পারেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষরা।
Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহীতে ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ীর সাথে মটরসাইকেলের সংঘর্ষে এক যুবকের-মৃত্যু

পদ্মা সেতুর এক বছর: পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে

আপডেট সময় ১২:৪১:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুন ২০২৩
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে উদ্বোধন করা হয়। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলেও ২৬ জুন থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতু একটি আকাঙ্খা, একটি স্বপ্নের নাম। বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সাহস। পদ্মা সেতু দেশের গর্ব। পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মুখের হাসি।
২০২২ এর ২৫শে জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর, ২৬ শে জুন জনসাধারণ জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে সাবলীল হয়েছে গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ। খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে।
আগের মতো আর ফেরিঘাটে অসহনীয় ভোগান্তি নেই। কাজ শেষ হলে ফেরি ধরার তাড়াও নেই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু।
রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় একবছর আগে যেতে পার হতে হতো ফেরি। দুই ঈদে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজট লেগেই থাকতো, এতে প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হতো জনসাধারণকে।
বিপদ ছিল শীতেও, ঘন কুয়াশায় সারারাত বন্ধ থাকতো ফেরি। এছাড়া বর্ষায় ছিল লঞ্চ দুর্ঘটনার শঙ্কা।
সব শঙ্কা আর দুর্ঘটনার পথ মাড়িয়ে পদ্মা সেতু চালুর পর বৃহত্তর যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল আর ফরিদপুরের ২১ জেলার মানুষ ১ থেকে ৪ ঘণ্টার পৌঁছে যাচ্ছেন রাজধানীর বুকে।
জানা গেছে, কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে অবস্থান করছে দেশের শীর্ষ অবকাঠামো পদ্মা সেতু। সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন থেকে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি সেতু এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পুরো সেতু এলাকায় সেনা সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।
সেতুর ওপরে এবং নিচে উভয় স্থানেই এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। সেতুর ওপরে ও নিচে, নদী এবং এর আশপাশের সড়ক, সড়কের বাইরেও বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি টিভি) ক্যামেরা।
উল্লেখ্য, ফেরি সংকটে অথবা আবহাওয়াজনিত জটিলতা, অথবা যানজটে পড়ে পদ্মা নদী পার হতে না পেরে তরমুজ বোঝাই শতাধিক গাড়ি আটকে পড়ার কাহিনী কারও অজানা নয়। শুধু তরমুজই নয়, মাদারীপুর থেকে আনা কলাই শাক, শরীয়তপুর থেকে আনা নানা ধরনের সবজি, ফরিদপুর থেকে আনা খেজুরের রস, বরিশাল ও  পটুয়াখালী থেকে আনা তরমুজ, বাঙ্গি, আমড়া ও মুরগির ডিমবাহী ট্রাকও পদ্মার পাড়ে আটকে থাকতো, ঘণ্টা পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। ফলে এসব পচনশীল পণ্য গরমে নষ্ট হয়ে যেতো। যা ফেলে দিতে বাধ্য হতেন ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ এসব পণ্য কম দামে বিক্রি করে দিয়ে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে বাড়ি ফিরতেন খালি হাতে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমন পরিস্থিতির অবসান হয়েছে বলে স্বস্তিতে আছেন পদ্মারের কৃষিজীবী মানুষের।
তারা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগে সেই অবস্থা আর নেই। এপারের ২১ জেলার কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বাড়ছে চাষাবাদ। বাড়ছে কৃষিনির্ভর খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন। জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হচ্ছে সেসব কৃষিপণ্যের চাষাবাদ। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সহজ হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ক্রেতাও মিলছে আগের তুলনায় বেশি। চুক্তি ভঙ্গ হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনে সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভাঙ্গা এলাকার কৃষক সত্তার মাদবর জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে বিভিন্ন পণ্য ঢাকায় পাঠাতে সময় লাগত ৮-১০ ঘণ্টা। ফেরি পারাপারে দেরি হওয়ার কারণে অনেক সময় নষ্ট হতো মূল্যবান এসব কৃষিপণ্য। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসান গুণতে হতো কৃষকদেরও। কৃষকরা দাম পেতেন কম। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষিপণ্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
আগে যেখানে ঢাকায় কোনো কাজ করতে গেলে যাওয়া-আসা মিলিয়ে সময় লাগতো তিনদিন, সেখানে এখন ভোরে ঢাকায় রওয়ানা দিয়ে দিনের কাজ শেষ করে সন্ধ্যার গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশ্যে পথ দেওয়া যায়।
আর রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের কিংবা প্রিয়তমা স্ত্রীর রান্না খেতে পারেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষরা।