বিপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজার ছোঁয়ায় এ যেন বদলে যাওয়া এক সিলেট। আগের আসরগুলোতে যেখানে তলানিতে ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি, এবার মাশরাফি নামক এক জাদুকরের স্পর্শে বাইশগজে দ্যুতি ছড়াচ্ছে তারা। আসরের শুরু থেকে দারুণ দাপট দেখিয়ে শিরোপা থেকে এখন নিঃশ্বাস দূরত্বে সিলেট স্ট্রাইকার্স। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তেমন আলোচনাতেই ছিল না সিলেটের নাম।
প্লে-অফের লড়াইয়ে কুমিল্লার কাছে হারের পর রংপুরের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয়। সেই সঙ্গে ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে কুমিল্লাকেই পেল সিলেট। আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দু’দল।
ফাইনাল ম্যাচে কোন প্লানে এগোবে দল। এছাড়া দলের বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন সিলেটের কোচিং প্যানেলের পাঁচ সদস্য।
সিলেটের প্রধান কোচ রাজিন সালেহ ফাইনাল প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসলে ভাবনা বলতে রাতে ম্যাচ শেষ হয়েছে। তেমন প্লান এখনো হয়নি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আমাদের দল যেভাবে খেলছে সেইভাবেই ফাইনালে খেলতে চাই। দলে সবার কন্ট্রিবিউশন যেন থাকে এটাই চাওয়া। শেষ ম্যাচে রংপুরকে হারানোর রাতে আমাদের দলের খেলোয়াড়রা প্লান মোতাবেকই খেলেছে এবং এভাবেই আমরা এগোবো।’
এছাড়া দলের পেসারদের কথা বলতে গিয়ে রাজিন বলেন, ‘পেসাররা আসলে আলহামদুলিল্লাহ, আপনি নিজেও তো দেখলেন কেমন করেছে। আমি আশাবাদী সবাইকে নিয়ে। সবাই তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলে, আমরাও সেটার জন্য মাঠে খেলব।’
এদিকে সিলেটের বোলিং কোচ নাজমুল হোসেন পেসারদের প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেন, ‘আমি যদি বলি পুরো টুর্নামেন্টে বিবেচনা করে, তাহলে একটা বা দুটো ম্যাচ বাদে আমাদের পেসাররা দারুণ করেছে, পার্সেন্টের হিসেবে ৮৫% বোলাররা ভালো করেছে। আমার কাছে মনে হয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কিন্তু বোলারদের জেতানোর সক্ষমতা বেশি থাকে। আমি দলের বোলারদের বলেছিলাম দায়িত্ব না নিলে কিন্তু জয় পাওয়া কঠিন। আজকে সাকিব যা বল করেছে অসাধারণ। এছাড়া টুর্নামেন্টে রাজা, রুবেল দারুণ করেছে।’
কুমিল্লার বিপক্ষে শিরোপা জেতার প্রত্যাশা জানিয়ে নাজমুল আরো বললেন, ‘আমাদের বোলিং ইউনিট সবসময় দুর্দান্ত। ফাইনালে আমার কাছে মনে হয় শেষ ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে যেমন খেলাটা খেলেছি এমনটা যদি খেলতে পারি আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ আমাদের শিরোপা জেতার একটা সম্ভবনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি রংপুরের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে সেটাই পেরেছি। এছাড়া শিরোপা জিততে ভাগ্যের ও প্রয়োজন।’
দলের অধিনায়ক মাশরাফিকে মুল্যায়ন করতে গিয়ে এই বোলিং কোচ বললেন, ‘মাশরাফি ভাইকে কিভাবে ব্যাখা করব আমার জানা নেই। পুরো টুর্নামেন্টে যেমন করছে…উনার সঙ্গে ২০ থেকে ২২ বছর ধরে আছি খেলছি, এখন কোচিং করাচ্ছি। সত্যি কথা বলতে উনি এক কথায় অসাধারণ। গতকাল রংপুরের বিপক্ষে তার বল করারই কথা ছিল না তবুও ৩ ওভার বল করেছে দলের অবস্থা বুঝে। উনার তৃতীয় ওভারে এসে মাত্র ৪ রান দিছে। আসলে এগুলো কি বলব মাশরাফি ভাইয়ের ৩ ওভার মোমেন্টাম পরিবর্তন করেছে। এছাড়া তার মত মানুষ মাঠে থাকা মানেই ১০% আসরা এগিয়ে থাকি সবসময়। যদি কপালে থাকে আমরা দল হয়ে খেলতে পারি আমারাই জিতব।’
এদিকে রংপুরের ম্যাচে দারুণ ফিল্ডিং করেছে সিলেট। দলটির ফিল্ডিং কোচ ডলার মাহমুদও তাই দিয়েছেন বাহবা। বলছিলেন, ‘দেখেন রংপুরের ম্যাচে কিন্তু একটা ক্যাচ ড্রপ হয়েছিল। ফিল্ডিংয়ের বিষয়টা হলো নার্ভের। যারা নার্ভ ধরে রাখতে পারবেন প্রাকটিস তো সবার থাকে। অনুশীলন সবাই করে সব পরিস্থিতিতে নার্ভের বিষয় থাকে। মেন্টালি যত ঠান্ডা থাকা যাবে তত বাস্তবায়ন ভালো হবে। আমাদের দলের ফিল্ডার বিশেষ করে জাকির, শান্ত, তৌহিদ হৃদয় এরা কিন্তু দারুণ ফিল্ডার। প্রত্যেকটা ম্যাচে কিন্তু দেখবেন দল ফিল্ডিং নিয়ে কিছু না কিছু করেছে। বিশেষ করে রান সেভের বিষয়, সবার অবদান ছিল অনেক।’
এছাড়া ফাইনাল নিয়ে ডলারের ভাবনা, ‘ফাইনাল ম্যাচ আসলে দেখেন প্রস্তুতি তো আগে থেকে আছে ভালো। ফাইনালে যাওয়া মানে কিন্তু ভাগ্যে এবং ভালো ক্রিকেট খেলা দরকার। এই দুটো থাকলে অবশ্যই চ্যাস্পিয়ন হওয়া সম্ভব। আমরা সে পথেই রয়েছি, বাকি কাজ খেলোয়াড়রা যদি করতে পারে ঘরে অবশ্যই কাপ আসবে।’
সিলেট দলের ব্যাটারা টুর্নামেন্ট শুরুর থেকে দারুণ করছেন। তাইতো দলটির ব্যাটিং কোচ তুষার ইমরান বেশ আশাবাদী শিরোপার ব্যাপারে সঙ্গে রাখছেন ভাগ্যকেও। বলছিলেন, ‘ফাইনাল খেলতে গেলে একটা ভাগ্য লাগে, সেটা আসাদের দিকেই যাচ্ছে বলে ফাইনাল খেলতে পারছি। শেষ ম্যাচ থেকে সবাই শিক্ষা নিয়ে এ ম্যাচে ভালো করেছে। জোড়া উইকেট পড়েছিল আগের ম্যাচে, তবে রংপুরের বিপক্ষে ব্যাটিং নিয়ে খুশি বলা যায়।’
ফাইনালে ব্যাটিং ইউনিট নিয়ে কি ভাবছেন, তুষার বললেন, ‘আমাদের হাতে একদিন রয়েছে। আজ ছোট পরিসরে একটা অনুশীলন করব। প্লানিং করার এখনো সময় রয়েছে। সবাই এনজয় করুক, উপভোগ করুক। আমরা ভালো একটা ফাইনালের অপেক্ষায় রয়েছি।’
সিলেটের সহকারী কোচ সৈয়দ রাসেলের মতে রংপুরের বিপক্ষে সাকিবের ওভার ছিল টার্নিং পয়েন্ট। বলছিলেন, ‘গতকাল বাটিংয়ে শেষ ম্যাচ থেকে ভালো ছিল, শুরুতেও আমাদের পক্ষে ছিল সব। বোলিংয়ে বলব রুবেল, সাকিব অসাধারণ বোলিং করছে। সেই সঙ্গে আমাদের উডসহ সবাই আসলে ভালো বোলিং করেছে। আমার কাছে মনে হয় রুবেলের ওই শামীমকে ফেরানোটা ভাইটাল উইকেট ছিল। এছাড়া সাকিবের ১৭তম ওভার ওটা আসলে অসাধারণ। ওই ওভারেই আসলে আমরা ম্যাচে ফিরেছে।’
দলটির অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে বলতে গিয়ে রাসেল বলেন, ‘মাশরাফির কথা নতুন করে কি বলব। মাশরাফি তো মাশরাফিই। এক লাইনে বলতে গেলে জাদুকর বলা যায়। কখন কি করার দরকার ওর আগে থেকে মুখস্থ থাকে আমার মনে হয়।’
ফাইনালে চাপ কুমিল্লার দাবি করে রাসেল বলেন, ‘ফাইনালে আসলে ভাই আমি বলব চাপটা কুমিল্লার কাছে। কারণ কুমিল্লার যে দল ওদের জেতায় লাগবে। তো আমাদের তো হারানোর কিছু নেই। আসরে আমরা কাগজেকলমে একটু পিঁছিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে আলহামদুলিল্লাহ আমরা ফাইনালে চলে আসছি। তো আমরা রিলাক্সে থাকব। চাপ সব কুমিল্লার, তারা কাগজে কলমেও ভালো দল। বড় বাজেটের দল তারা, সেই চাপটাই আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’
ফাইনাল জেতার প্রত্যাশা নিয়ে রাসেল আরো বলেন, ‘প্রথম কোয়ালিফায়ারে আমরা যেটা হারলাম কুমিল্লার সঙ্গে সেখানে আমরা আমাদের ৫০% খেলা খেলতে পেরেছি। আমাদের সবটুকু দিতে পারিনি। ফাইনালে আমাদের যে খেলোয়াড় আছে তারা যদি ৮০% দিতে পারে তাহলে আমার মনে হয় কুমিল্লাকে হারানো সম্ভব।’