• রাজনীতির মাঠে ‘পাহারাদারের’ ভূমিকায় আওয়ামী লীগ
• চেষ্টা বিএনপির কৌশল বোঝা
• কর্মসূচি দিয়ে মাঠে সক্রিয় বিএনপি
• নির্বাচনী বছরে সহিংসতা এড়ানোর পরিকল্পনা
• আঘাত এলে প্রতিঘাতের প্রস্তুতি
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখন ‘পাহারাদারের’ ভূমিকা পালন করছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সব কর্মসূচির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে দলটি। গত ১০ ডিসেম্বর, ৩০ ডিসেম্বর এবং ১১ জানুয়ারি বিএনপির কর্মসূচির দিনে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীনরা। আগামীতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সব কর্মসূচির দিনে মাঠে শক্ত অবস্থানে থাকার বিষয়টিও এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
নির্বাচনী বছরে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা চাইছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেউ আঘাত করলে তার প্রতিঘাতের প্রস্তুতি নিয়েই দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি দিতে হবে বলে আমি মনে করি না। তাদের সেই শক্তি নেই, সমর্থনও নেই। তারা নির্বাচনকে ভয় পায়, এই কারণে তারা চোরাই পথে হাঁটে, অন্ধকারের পথে হাঁটে।
বিএনপির ‘চোরা পথ’ নিয়ে সতর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় সতর্ক রয়েছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে। আমরা বর্তমানে সতর্ক রয়েছি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করব না।
আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার ভাষ্য, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি দেশে নানা কর্মসূচি ছাড়াও বিদেশি রাষ্ট্রের দূতদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কান ভারী করছে। আমরা সেগুলোকে গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করছি। আসলে বিএনপি কী করতে চাইছে তা বোঝার চেষ্টা করছি। আপনারা বলতে পারেন, রোগ বুঝে ওষুধ দিচ্ছি।
আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন সক্রিয়। অতীতের তুলনায় বর্তমানে ঘন ঘন কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। গণঅবস্থান থেকে সমাবেশের ডাক দিচ্ছে তারা। তবে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সব কর্মসূচিকে সতর্কভাবে পাহারা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি, কারণ আমরা জনগণের পাহারাদার। জনগণের নিরাপত্তা এবং সম্পদের পাহারাদার হচ্ছি আমরা। কোনো ভাঙচুর, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোকাবিলা করবে। আমরা জনগণের পাশে আছি, জনগণের পাশে থেকে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করব।’
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভা গত শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা সদস্যরা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার ভাষ্য মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি আবারও মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের চেষ্টাও করছে। বিএনপিকে অনেক মানবতা দেখানো হয়েছে, আর মানবতা দেখানোর সুযোগ নেই। তারা সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
তারা আরও বলেন, ১/১১ সময়ে যারা রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল, সেই শক্তি আবারও তৎপর। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে এগুলো শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথসভার বক্তাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জিং। এটা মাথায় রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, গত নির্বাচনের ইশতেহারের যতটুকু বাস্তবায়ন করেছি, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থানের যে অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলো মানুষের মধ্যে বলা এবং উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, নিপীড়ন, নির্যাতন, লুণ্ঠন, দুর্নীতিও তুলে ধরা হবে। তারা যে কাজগুলো করে দেশকে ধ্বংস করেছিল, তারা আবার সুযোগ পেলে তার থেকেও বেশি করবে। সেগুলো তুলে ধরাই আমাদের কাজ।’