আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকার গঠনের সময় বাংলাদেশ ছিল ৬০তম অর্থনীতির দেশ, গত ১৪ বছরে আজকে সেটি ৩৫তম অর্থনীতির দেশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বদলে গেছে এবং বদলে যাচ্ছে।
সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া জিডিপির আকারে আমাদের চেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশ, পাকিস্তান তো বটেই, আর কোনো কোনো সমীক্ষা মতে বাংলাদেশের অবস্থান পিপিপিতে ৩১তম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে, সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকত তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এমনকি সিঙ্গাপুরের আগেই বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প শুনতো।’
সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের জহির রায়হান হলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রকাশিত সাম্প্রতিক ‘দ্য টপ হেভি গ্লোবাল ইকনোমি’ তালিকায় ৩৫তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আজকে এই খবরে দেশের গণমাধ্যমে যেভাবে প্রশংসা হওয়া দরকার আমি কিন্তু সেটা দেখছি না। যদি বাংলাদেশ কোনো সূচকে পিছিয়ে যায়, তখন গণমাধ্যমে সেটি যেভাবে ফলাও করে প্রচার হয় কিন্তু অর্থনীতির আকার অনুযায়ী জিডিপির হিসাব অনুযায়ী আমরা যখন এগিয়ে গেলাম, সেটিও ফলাও করে প্রচার হওয়া প্রয়োজন।
গত বছরের অসামান্য অর্জনের চিত্র তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ২০২২ সালে বিশ্বের জন্য একটি দুঃসময় কেটেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে গতবছর এবং কোনো কোনো দেশে করোনা মহামারি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্বোধন করেছেন, ঢাকায় মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে।
বিদেশি গণমাধ্যমে দেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা ঢাকায় মেট্রোরেল শুরু হওয়ার পর একটি ফিচারে লিখেছে- ঢাকার মেট্রোরেল আমাদের অনেক পরে শুরু হলেও আধুনিকতার দিক দিয়ে কলকাতার চেয়ে এগিয়ে। তিন দশক পরেও কলকাতায় মেট্রোরেলে কোনো নারী চালক নেই। আর ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল একজন নারী চালিয়েছে এবং ৬ জন চালক নারী। অর্থাৎ দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এখানে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মন্ত্রী হাছান বলেন, একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করলেও আমাদের স্বাধীনতা তখনও পূর্ণতা পায়নি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যিনি হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালির জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটিয়ে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান শিখিয়েছেন, এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে যার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা এসেছে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সেই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনেই আমাদের স্বাধীনতা সত্যিকার অর্থে পূর্ণতা পেয়েছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর বাবা শেষ লুৎফর রহমান এক কোনায় বসে আছেন, আর ছেলে বঙ্গবন্ধু মুজিব জনতার কাছে। কারণ জাতির পিতা মুজিব তখন শুধু শেখ লুৎফর রহমানের সন্তান নন, তিনি জনগণের মুজিব। এটিই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু।
জাতীয় জীবনে চলচ্চিত্রের ভূমিকার কথা বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের চলচ্চিত্র যেন সমাজের অসঙ্গতি দূর করে দেশটাকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে সহায়তা করে। বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি সমাজকে পরিশুদ্ধ, পরিশীলিত করার জন্যে যেন ভূমিকা রাখে, আজকের দিনে সেটিই আমার প্রত্যাশা। অনুষ্ঠানে বাচসাস সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ বক্তব্য রাখেন।