বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের সঙ্গে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন সদস্যের ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ছবি ঘিরে চলছে নানা আলোচনা। তবে ওই ছবিটি এডিট করা এবং এটি সংঘবদ্ধ চক্রের প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করেছেন নুর ও তার দল গণঅধিকার পরিষদের নেতারা।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে কথা হয় বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু । ভাইরাল হওয়া ছবি প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘এটি এডিট করা ছবি। আমি দেশের বাইরে এসেছি, এখানে দলমত নির্বিশেষে মানুষের স্বতস্ফূর্ত গণজাগরণ দেখা যাচ্ছে। এজন্য সরকার ও তার দলের নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। বলা হচ্ছে আমরা মোসাদের সঙ্গে মিটিং করেছি।’
নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিকভাবে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন করছি। কোনো গোপন আঁতাত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাই। এই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে চাই। এটা নতুন কিছু নয়। আমাদের উত্থানের শুরু থেকেই ‘জামায়াত-শিবির’, ‘তারেক রহমান টাকা দিয়েছে’, এই-সেই নানা ধরনের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ছবি ভাইরাল করার বিষয়টি সংঘবদ্ধ চক্রের প্রোপাগান্ডা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সংবাদের সোর্স হিসেবে যারা সংবাদ ছেপেছে, তারা আওয়ামী লীগের গুজব ও প্রোপাগান্ডার মেশিনদের পোস্ট থেকেই এই নিউজগুলো করেছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে, এটা সংঘবদ্ধ চক্রের প্রোপাগান্ডা। আমি খুব শিগগিরই দেশে এসে আরও স্পষ্ট বক্তব্য দেব এবং প্রতিবাদ করব।’
ছবির বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘এটি সুপার এডিটেড ছবি। এই ধরনের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে নুরের দেখা হয়নি। এ নিয়ে নুরের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তার দেখা বা কথা হয়নি। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে দুইজন দুই দিকে তাকিয়ে আছেন। তাছাড়া কেউ গোপন বৈঠক করলে তার ছবি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে?’
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, ‘চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅধিকার পরিষদকে সরানোর জন্য একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ মোটেও বিচলিত নয়। এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণঅধিকার পরিষদ কাজ করে যাবে।’
জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে দেশ ছাড়েন নুরুল হক নুর। তখন তিনি ওমরাহ করার কথা বলে গিয়েছিলেন। তবে আরও কয়েকটি দেশে ঘুরে তিনি সৌদি আরবে পৌঁছান বলে জানা গেছে। সপ্তাহ খানেক পর তিনি দেশে ফিরবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ছড়িয়ে পড়া ছবিতে নুরের সঙ্গে থাকা ব্যক্তির নাম মেন্দি এন সাফাদি। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সদস্য বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৬ সালে ইসরায়েলি এক নেতার সঙ্গে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বৈঠক করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই অভিযোগে তখন তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখনো তিনি কারাগারে আছেন।