সরকার দলীয়করণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস ও নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, আসলে এই সরকার দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। সে কারণে এসব মেরামতের বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ বিষয়ক পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল বিএনপির মিডিয়া সেল। গত ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি।
তিনি বলেন, সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করা হবে, এটা তো সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা আছে। রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যেই বিএনপি ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে। আজকে দেশে বিরোধী দলগুলো সভা সমাবেশ করতে পারে না দাবি করে নজরুল ইসলাম বলেন, আজকে প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাগারে বন্দি। কোথায় আজকে ন্যায়বিচার? চারবার আবেদনের পরও তাদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম কী জিনিস তা মানুষ টের পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী দুর্ভিক্ষের কথা বলেন, আবার ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইভিএম কিনতে চাইছেন। আসলে এই সরকার দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। ফলে এসব মেরামতের বিকল্প নেই। যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। এটা তো সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা আছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আজকে সরকার জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ তারা নাকি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাহলে জনগণ ভোট দিলো কোথায়? আগের রাতেই ভোটের বাক্স ভর্তি করা হয়েছে, যা সারাবিশ্বের লোকজন বলেছে। নির্বাচন কমিশনার নিজেও বলেছেন। ২০১৪ সালে তো ভোট কেন্দ্রে ভোটারই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা স্ট্যানবাজি- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, তো রাষ্ট্র কি বস্তু? ধরা যায়? ছোঁয়া যায়? কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে তেমনি একটি হলো সংবিধান। যাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা হলো সর্বোচ্চ আইন। এ ধরনের বিষয় নিয়ে রসিকতা করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, যে দেশের প্রধান বিচারপতি সরকারের বিরাগভাজন হলে পদচ্যুত ও দেশছাড়া করা হয়, তাতে বোঝা যায় বিচার বিভাগ কতোটা স্বাধীন? আমরা এসব বন্ধ করার লক্ষ্যেই রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেছি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছি সেই গণতন্ত্রের অবস্থা কী? গণতন্ত্রের প্রধান বাহন হলো নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে বাংলাদেশে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থীকে ভোট করতে দেওয়া হয় না। প্রচারণা চালাতে দেয় না। অর্থাৎ ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৭২-৭৫ সালে দেশের কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ওই সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই পল্লী বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু আজকের ক্ষমতাসীনরা কারো অবদান স্বীকার করতে চান না। সে সময় দুই ও তিন শিফটে কারখানা চালু রেখেছিলেন। উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা নিয়ে যদি কারো কোনো প্রস্তাব থাকে সেগুলো বিবেচনা করা হবে। ২৭ দফায় বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেসব করা হবে যোগ্য ও দক্ষ লোকদের দিয়ে।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান ও দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. খায়রুজ্জামান ফখরুলের পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।