সারা বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন,মিথ্যা মামলার হয়রানি শিকার ও নওগাঁ সদর উপজেলার তিলেকপুর ইউপি চেয়ারম্যান কতৃক সাংবাদিক সবুজ হোসেন ও মানিক হোসেন লাঞ্ছিত ঘটনা নিয়ে নওগাঁ জেলা প্রসাশক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধ হয়েছে।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন দ্রুত সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন,সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল বা তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর নামই বেশি আসে খবরে৷তবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্য ‘বড় দলগুলোর’, এমনকি তথাকথিত অরাজনৈতিক সংগঠন বা বিভিন্ন পেশাজীবীদের রোষানলেও পড়তে হয় সাংবাদিকদের।সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের বিচার হয় না বলেই নির্যাতনকারীরা বেপরোয়া৷ স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কতজন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার কোনো হিসেব নেই ।
বিভিন্ন মেয়াদের বিচ্ছিন্ন কিছু হিসাব পাওয়া যায়৷ ২০০১ সাল থেকে ২০১৬- এই ১৬ বছরে দেশে ২৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷ বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসনামলে নিহত হন ১৪ জন সাংবাদিক, আর আহত হন ৫৬১ জন৷ আর ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে নয় বছরে খুন হন নয় জন সাংবাদিক৷ আরেক পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে বাংলাদেশে ৩৮ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ডের এই খতিয়ান পূর্ণাঙ্গ নয়৷ অনেক ঘটনাই রয়ে গেছে আড়ালে৷ সাংবাদিক নির্যাতন এ দেশে নতুন কিছু নয়৷ ইতি পূর্বে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, শহীদ সাবের, আবুল বাশার, শিবসাধন চক্রবর্তী, চিশতী শাহ্ হেলালুর রহমান, মুহাম্মদ আখতার, সেলিনা পারভীনরা দেশের জন্য নির্যাতন ভোগ করেছেন, শহিদও হয়েছেন৷ ৫১ বছর হলো দেশ স্বাধীন হয়েছে৷ কিন্তু ৫১ বছরেও সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি৷ সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়ে বিএমএসএস রাজশাহী বিভাগীয় কমিটি যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুজাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে।
সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়,যারা দূর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত, ব্যবসায়ীরা, অর্থশালীরা করছে।আসলে যাদের বিরুদ্ধে খবর হচ্ছে, তারাই হামলা করছে৷ যারা অন্যায় করে, দখল করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তারাই হামলাকারী৷ আবার নির্দিষ্ট কোনো পেশার সবাই কিন্তু এটা করেন না৷ এই খারাপ মানুষগুলোই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন৷ আমরা যদি এখন থেকে শক্তভাবে প্রতিবাদ শুরু করি তাহলে সাংবাদিক নির্যাতন কমতে পারে৷সাংবাদিকদের ঐক্যের অভাবের কারণে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ রাজনৈতিক বিভাজনই সাংবাদিকদের দুর্বল করেছে।
ফলে তারা জনমত তৈরি করতে পারছে না। অথচ সাংবাদিকদের পক্ষেই জনমত তৈরি করা সবচেয়ে সহজ৷তিনি আরও বলেন যত দিন দূর্নীতি অনিয়ম বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে না। বিএমএসএস কেন্দ্র কমিটির সভাপতি খন্দকার আসিফুর রহমান মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না।
তিনি বলেন, ‘‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ বিচারের জন্য আমাদের বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে৷ এই যে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের অনেক সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত খুনিদের ধরতে পারেনি৷ আমার তো মনে হয়, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিটাই সাংবাদিকতা পেশাকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে৷সাংবাদিক নির্যাতন কমাতে হলে, সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।সারা বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন হচ্ছে।নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এবং সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের সারা দেশে মানববন্ধন করা হবে আর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় সাংবাদিক কামাল হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে।
তার অপরাধ, জাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ পেয়ে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন৷ ছবি তোলার এক পর্যায়ে তার ওপর হামলা চালায় বালু ব্যবসায়ীরা৷বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন যেন নিত্যদিনের ঘটনা৷শুধু হামলা নয়, প্রচুর মামলারও শিকার হন সাংবাদিকরা৷ ২০২১ সালে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে।
এই মামলাগুলোর বড় একটা অংশ হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে৷ ইয়াস,পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন বলছে, করোনাকালে এবং এর আগে-পরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দল ও বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রোষানলে পড়ে হামলা, মামলাসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২১০ জন সাংবাদিক৷ এর মধ্যে নওগাঁয় সাংবাদিক সবুজ হোসেন, মানিক হোসেন চেয়ারম্যান কতৃক লাঞ্ছিত এবং রাশেদুজ্জামান রাশেদ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। নওগাঁ জেলা প্রসাশক বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন হামলার শিকার,লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি।ঘটনার বিষয়ে জেনে আইনি সহয়তা করা হবে।