আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় দলের ৫৫৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ডিএমপির পৃথক তিনটি থানায় মামলা করেছে পুলিশ। পল্টন মডেল থানা, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় এসব পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তার মধ্যে পল্টন থানায় ৪৭৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ। ওই মামলায় অজ্ঞাত আরও দেড় থেকে দুই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এ সংঘর্ষের ঘটনায় মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। মতিঝিল থানার মামলায় ২৮ জন ও শাহজাহানপুরের মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের করা এই দুই মামলায় আরও ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ বলছে, পল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পল্টন মডেল থানায় মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল।
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের ভেতর থেকে অবিস্ফোরিত ১৫টি ককটেল, দুই লাখের বেশি টাকা, অসংখ্য পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল এবং রান্না করা খিচুড়ির কয়েকটি ডেকচি ও বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এনামুল হক মিঠু বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় ৪৭৩ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও বিস্ফোরক আইনে এসব মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ বাদী হয়ে একাধিক মামলা করেছে। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, অবৈধ সমাবেশের তিনদিন আগে নেতাকর্মীরা চাল ও ডাল নিয়ে নয়াপল্টন এলাকা দখল করতে আসে। এর প্রেক্ষিতে বাধা দিতে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অতর্কিত হামলা চালায়। পাল্টা হিসেবে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এদিকে, বিএনপির গণসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রায় সব প্রবেশমুখ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাবতলী, বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে। গাড়ি থামিয়েও চলছে তল্লাশি।