ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরের সাবেক টিআই দম্পতির আরও সোয়া ৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

ফরিদপুর জেলা পুলিশের সাবেক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর আরও সোয়া সাত কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে নতুন করে জব্দের তালিকায় ঢাকায় তুহিন লস্করের নামে একটি ফ্ল্যাট ও গোপালগঞ্জে তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুমের নামে বহুতল ভবনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সম্পদের বিষয়ে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি ওই দম্পতি।

দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী উপপরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ইমরান আকন। ফরিদপুর সিনিয়র স্পেশাল আদালতের জজ মো. জিয়া হায়দারের ১৬ অক্টোবর এক আদেশে এই সম্পদ জব্দ করা হয়।

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান লস্করের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর ফরিদপুরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুম একজন গৃহিণী।

এর আগে ১৫ অক্টোবর দুদকের কর্মকর্তা ইমরান আকন দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৮–এর বিধানমতে সম্পদ জব্দের এবং রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেন।

তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ইতিপূর্বে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে এই দম্পতির নামীয় ব্যাংক হিসাব এবং কিছু স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অনুসন্ধানকালে আরও কিছু সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছেন। এসব সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর করতে পারেন। সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা সদরে জামিলা পারভীনের নামে নির্মিত ভবন

ক্রোক করা না হলে হস্তান্তর কিংবা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। সে কারণে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৮ বিধানমতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামীয় অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা অবরুদ্ধকরণের মাধ্যমে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেন তিনি।

পরে আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৮ অনুযায়ী এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেন এবং একই সঙ্গে এর সঠিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জকে রিসিভার নিয়োগ দেন।

নতুন করে জব্দের তালিকায় রয়েছে ৭ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০১ টাকার স্থাবর সম্পদ। তার মধ্যে ঢাকার মিরপুরে রাকিন সিটি প্রজেক্টে অবস্থিত বিল্ডিং এ৬, টাওয়ার-০১–এর ৬ষ্ঠ তলায় ১ হাজার ৮৭২ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার মূল্য চুক্তিপত্র অনুযায়ী ১ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০১ টাকা। ফ্ল্যাটটি তুহিন লস্করের নিজ নামে রয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা সদরের খাটরা মৌজার ৫ দশমিক ২০ শতক জায়গায় অবস্থিত ৬তলা একটি ভবন তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুমের নামে রয়েছে। যার মূল্য ৬ কোটি টাকা। এসব সম্পদ তাঁরা আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি বলে দুদক জানায়।

দুদকের কর্মকর্তা ইমরান আকন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, এর আগে আদালতের আদেশে তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা তিন কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং ১ কোটি ৬ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। এরপর অনুসন্ধানকালে আরও সম্পদের সন্ধান ও প্রমাণ পাওয়া যায়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরের সাবেক টিআই দম্পতির আরও সোয়া ৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

আপডেট সময় ০৩:০২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

ফরিদপুর জেলা পুলিশের সাবেক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর আরও সোয়া সাত কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে নতুন করে জব্দের তালিকায় ঢাকায় তুহিন লস্করের নামে একটি ফ্ল্যাট ও গোপালগঞ্জে তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুমের নামে বহুতল ভবনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সম্পদের বিষয়ে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি ওই দম্পতি।

দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী উপপরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ইমরান আকন। ফরিদপুর সিনিয়র স্পেশাল আদালতের জজ মো. জিয়া হায়দারের ১৬ অক্টোবর এক আদেশে এই সম্পদ জব্দ করা হয়।

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান লস্করের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর ফরিদপুরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুম একজন গৃহিণী।

এর আগে ১৫ অক্টোবর দুদকের কর্মকর্তা ইমরান আকন দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৮–এর বিধানমতে সম্পদ জব্দের এবং রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেন।

তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ইতিপূর্বে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে এই দম্পতির নামীয় ব্যাংক হিসাব এবং কিছু স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অনুসন্ধানকালে আরও কিছু সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছেন। এসব সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর করতে পারেন। সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা সদরে জামিলা পারভীনের নামে নির্মিত ভবন

ক্রোক করা না হলে হস্তান্তর কিংবা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। সে কারণে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৮ বিধানমতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামীয় অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা অবরুদ্ধকরণের মাধ্যমে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেন তিনি।

পরে আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৮ অনুযায়ী এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেন এবং একই সঙ্গে এর সঠিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জকে রিসিভার নিয়োগ দেন।

নতুন করে জব্দের তালিকায় রয়েছে ৭ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০১ টাকার স্থাবর সম্পদ। তার মধ্যে ঢাকার মিরপুরে রাকিন সিটি প্রজেক্টে অবস্থিত বিল্ডিং এ৬, টাওয়ার-০১–এর ৬ষ্ঠ তলায় ১ হাজার ৮৭২ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার মূল্য চুক্তিপত্র অনুযায়ী ১ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০১ টাকা। ফ্ল্যাটটি তুহিন লস্করের নিজ নামে রয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা সদরের খাটরা মৌজার ৫ দশমিক ২০ শতক জায়গায় অবস্থিত ৬তলা একটি ভবন তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুমের নামে রয়েছে। যার মূল্য ৬ কোটি টাকা। এসব সম্পদ তাঁরা আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি বলে দুদক জানায়।

দুদকের কর্মকর্তা ইমরান আকন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, এর আগে আদালতের আদেশে তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা তিন কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং ১ কোটি ৬ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। এরপর অনুসন্ধানকালে আরও সম্পদের সন্ধান ও প্রমাণ পাওয়া যায়।