প্রত্যক্ষ করের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে ধনী-গরিবের বৈষম্য এক সময় কমে আসবে। এজন্য প্রয়োজনে এই করের হার বাড়ানো যেতে পারে।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ইউজিং ডাইরেক্ট ট্যাক্সসন টু টেকলি ইনকোয়ালিটি অ্যান্ড বুস্ট রেভিনিউ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এ মত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইআরএফ এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রেগেশন ফর ডেভলপমেন্ট (র্যাপিড)।
এতে বক্তারা বলেন, সমাজে আয় বৈষম্য বাড়ছে, এটা কমাতে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। এজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। রিটার্ন না দেওয়ার সুযোগ নেই। জনগণ কেন ট্যাক্স দেবে না। এনবিআরকে জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এনবিআর সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মাহমুদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাদী বর্তমান সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক বেশি। বিশ্বায়নকে মাথায় রেখে আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে পরোক্ষ কর কমিয়ে আনতে কাজ করছে এনবিআর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইয়াজদানী খান বলেন, ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের আকারের তুলনায় জিডিপির সাইজ অনেক কম। এই ব্যবধানটা বেশি হওয়ায় আমাদের কাজটা বেড়ে যায়। সেকারণে ব্যবসায়ীদের পাইওনিয়ার হতে হবে।
তিনি বলেন, অগ্রিম আয়কর পপুলার কনসেপ্ট। এজন্য একটাই সমাধান এনবিআরকে অটোমেশনে যেতে হবে।
এনবিআরের ট্যাক্স পেয়ার সার্ভিস উইং নেই, এটা আমাদের দুর্বলতা, অটোমেশনের পাশাপাশি সার্ভিস উইং তৈরি করা। এটার জন্য এনবিআরকে আলাদা জোন করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানো ঠিক না, তাদের অনেকগুলো ট্যাক্স দিতে হয়, এফডিআই আমাদের বেশি বেশি আনতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এনবিআরকে রুল ও রেগুলেশন নিয়ে ভাবতে হবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, এনবিআরের কাঠামোতে অনেক সমস্যা আছে। আমরা অনেক কাজ করেছি, কোথায় যেন সব হারিয়ে যাই। যেখানে স্বার্থের এত সংঘাত, সেখানে রিফর্মটা আমাদের করতে হবে। ২৫ শতাংশ পারসোনাল ট্যাক্স আছে এটা থাকুক। এটা বাড়ালে ফাঁকির একটা চেষ্টা থাকে।
তিনি বলেন, এনবিআরের লিডারশীপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোয়ালিটি লোকজন না হলে প্রশাসনকে আমি কিভাবে সম্পৃক্ত করবো। অটোমেশন পুরোপুরি হলে রাজস্ব ডাবল হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে আমাদের জোর দিতে হবে। মাত্র ৮ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় এটা কম, সম্পদের বৈষম্য কমাতে সরাসরি করের কোনো বিকল্প নেই।
নাসির উদ্দীন বলেন, বাজেটে সরকারি খরচ হচ্ছে জিডিপির ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। অন্যান্য দেশ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সরকারি ব্যয় করে। এই বাজেট বেশি বেশি বাড়ানো গেলে সমাজে সবচেয়ে দরিদ্র গোষ্ঠী উপকৃত হতো। এর একটি কারণ হলো রেভিনিউ জেনারেট কম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যক্ষ কর আসে ৩৫ এবং পরোক্ষ কর আসে ৬৫ শতাংশ। কিন্তু সরকার এখন প্রত্যক্ষ কর ৭০ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর ৩০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়েছে। যে দেশগুলো প্রত্যক্ষভাবে কর বেশি আদায় করতে পারে, সেই দেশের আয় বৈষম্য অনেক কম। কিন্তু আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ কর জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও সরকারি ব্যয় অত্যন্ত কম। প্রত্যক্ষ কর টাকার অংকে বেড়েছে কিন্তু জিডিপির অর্থে বাড়েনি। আমাদের চেয়ে ভারত অনেক বেশি জিডিপির ট্যাক্স আদায় করছে। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত কম। ২০৩১ সালের মধ্যে বাড়িয়ে ১৭ ভাগ করতে হবে।
সেমিনারে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, ধনী-গরিবের বৈষম্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা সরকারের কাছে আসা করবো যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ও র্যাপিড এর নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফ।