ঢাকা ০৩:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামের ৩৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শহরাঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রামেও। গ্রামীণ এলাকার ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। একইসঙ্গে তাদের মাঝে কমপক্ষে একটি, দুটি বা তিনটি সাইবার অপরাধের প্রবণতা ছিল যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গ্রাম এলাকার ৪৬০ জন শিশুর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা বেশি শিকার হয় এমন বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ছিল উৎপীড়ন, উপহাস, গুজব কিংবা অপমান (৩৫ শতাংশ), অসৎ উদ্দেশ্যে বেনামে যোগাযোগ (২৯ শতাংশ), যৌন-নিপীড়নমূলক বার্তা কিংবা মন্তব্য (১১ শতাংশ) এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিও (১৭ শতাংশ)।

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের নীতির কারণে, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে কম জ্ঞান এবং সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে, অপরাধীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদেরকে নির্যাতন করতে সক্ষম হয়।

গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়, যেসব শিশু ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুম ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

এছাড়াও ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশু নির্যাতন সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি গতানুগতিক এবং কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা যার মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষত কমবয়সী শিশু, মেয়ে-শিশু এবং গরীব শিশু তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পরিবার, খোলা এবং কর্মক্ষেত্রে তারা নিম্নস্তরে এবং নিম্ন অবস্থানে থাকায় তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম আরও বলেন, শিশুর ১৮ বছর বয়সের আগে ঘটে যাওয়া আঘাতমূলক এবং পীড়াদায়ক ঘটনা যা শিশুর উপর মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন, মানসিক এবং শারীরিক অবহেলা, পিতামাতার বিচ্ছেদ, মায়ের প্রতি সহিংসতা, বাড়িতে মাদকের ব্যবহার, পরিবারে মানসিক রোগী থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের কারাবাস- এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা তিন বা ততোধিক প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, তাদের মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা সম্পন্ন শিশু জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। অন্য একটি গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার সঙ্গে প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার একটি উল্লেখযোগ্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

এ সময় বক্তারা বলেন, শিশু নির্যাতন একটি নিত্যনৈমিত্তিক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা যা বাংলাদেশি সমাজে সর্বজন স্বীকৃত। কমবয়সী শিশু, মেয়ে এবং দরিদ্র শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুদের সবসময় ছোট এবং বাবা-মার অধীনস্থ মনে করা হয়, তাই পরিবার, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে কোথাও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশি পিতা-মাতারা অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন যা তাদের অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, এবং শিশু নির্যাতনের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার খুবই সামান্য; বস্তি এলাকায় বসবাসকারী মাত্র ৭ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৪ শতাংশ মেয়ে শিশু তার নিজ এলাকার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। মাত্র ০.৫ শতাংশ শিশুর নিজস্ব টয়লেট রয়েছে, যা বস্তি এলাকায় মৌলিক চাহিদা মেটানোর অধিকার বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনাকে চিত্রিত করে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রামের ৩৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে

আপডেট সময় ০৮:০২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শহরাঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রামেও। গ্রামীণ এলাকার ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। একইসঙ্গে তাদের মাঝে কমপক্ষে একটি, দুটি বা তিনটি সাইবার অপরাধের প্রবণতা ছিল যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গ্রাম এলাকার ৪৬০ জন শিশুর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা বেশি শিকার হয় এমন বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ছিল উৎপীড়ন, উপহাস, গুজব কিংবা অপমান (৩৫ শতাংশ), অসৎ উদ্দেশ্যে বেনামে যোগাযোগ (২৯ শতাংশ), যৌন-নিপীড়নমূলক বার্তা কিংবা মন্তব্য (১১ শতাংশ) এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিও (১৭ শতাংশ)।

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের নীতির কারণে, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে কম জ্ঞান এবং সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে, অপরাধীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদেরকে নির্যাতন করতে সক্ষম হয়।

গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়, যেসব শিশু ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুম ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

এছাড়াও ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশু নির্যাতন সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি গতানুগতিক এবং কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা যার মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষত কমবয়সী শিশু, মেয়ে-শিশু এবং গরীব শিশু তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পরিবার, খোলা এবং কর্মক্ষেত্রে তারা নিম্নস্তরে এবং নিম্ন অবস্থানে থাকায় তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম আরও বলেন, শিশুর ১৮ বছর বয়সের আগে ঘটে যাওয়া আঘাতমূলক এবং পীড়াদায়ক ঘটনা যা শিশুর উপর মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন, মানসিক এবং শারীরিক অবহেলা, পিতামাতার বিচ্ছেদ, মায়ের প্রতি সহিংসতা, বাড়িতে মাদকের ব্যবহার, পরিবারে মানসিক রোগী থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের কারাবাস- এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা তিন বা ততোধিক প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, তাদের মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা সম্পন্ন শিশু জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। অন্য একটি গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার সঙ্গে প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার একটি উল্লেখযোগ্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

এ সময় বক্তারা বলেন, শিশু নির্যাতন একটি নিত্যনৈমিত্তিক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা যা বাংলাদেশি সমাজে সর্বজন স্বীকৃত। কমবয়সী শিশু, মেয়ে এবং দরিদ্র শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুদের সবসময় ছোট এবং বাবা-মার অধীনস্থ মনে করা হয়, তাই পরিবার, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে কোথাও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশি পিতা-মাতারা অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন যা তাদের অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, এবং শিশু নির্যাতনের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার খুবই সামান্য; বস্তি এলাকায় বসবাসকারী মাত্র ৭ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৪ শতাংশ মেয়ে শিশু তার নিজ এলাকার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। মাত্র ০.৫ শতাংশ শিশুর নিজস্ব টয়লেট রয়েছে, যা বস্তি এলাকায় মৌলিক চাহিদা মেটানোর অধিকার বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনাকে চিত্রিত করে।