চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই ঘোষণা ভেঙে দল পালটিয়ে রাজনীতির মাঠে ফেরেন। কিন্তু সক্রিয় হয়ে উঠা হয়নি।
এবার তিনি সংসদ নির্বাচন করতে চান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর ও পাহাড়তলী) আসন থেকে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি এবারও নৌকার টিকিট পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া মনজুর আলম ছিলেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য। মহিউদ্দিনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মহিউদ্দিনকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তাকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়।
২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনেও তিনি বিএনপির মনোনয়নে অংশ নেন। কিন্তু ভোটের দিন মাঝপথে বিএনপি তাকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বলে। এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি অভিমানী মনজুর। ওইদিনই রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
পরে অবশ্য তিনি পুরোনো দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করেন। কয়েকবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হয়ে এবার এম মনজুর আলম চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর ও পাহাড়তলী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এম মনজুর আলম বলেন, ‘নির্বাচন করব— এটা আমি আপনাদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকব। আমার মা-ও নেই, বাবাও নেই। আমি এতিম। জনগণই আমার মা-বাপ। জনগণের সঙ্গেই থাকব। ইনশাল্লাহ, মানুষের জন্য কাজ করব, নির্বাচনে জিতে সংসদে যাব। আমার জোর দাবি, নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়।’
এর আগে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে মনজুর চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। কিন্তু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. আফসারুল আমিনের কাছে হারেন।
এরপর রাজনীতিতে কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থেকে ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন আদায় করেন মনজুর। সেই নির্বাচনে তিনি মহিউদ্দিনকে লাখো ভোটের ব্যবধানে হারান। মনজুরকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ দেওয়া হয়। বিএনপির রাজনীতিতে গেলেও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী পালন, বঙ্গবন্ধু ও তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন তিনি।
তবে নির্বাচনের পর মহিউদ্দিন ও মনজুরের মধ্যে সম্পর্ক আবার ‘পুনঃস্থাপন’ হয়। সিটি করপোরেশন পরিচালনায় বিভিন্ন পরামর্শের জন্য মনজুর বারবার ছুটে গেছেন পূর্বসূরীর কাছে। মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও মহিউদ্দিনের কণ্ঠে কখনোই তা শোনা যায়নি। আর মনজুরের মধ্যেও ছিল শ্রদ্ধা ও আনুগত্য। মৃত্যুর আগে মহিউদ্দিন মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে উদ্যোগী ছিলেন।
২০১৫ সালে মনজুরকে আবার বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে পরাজিত হন। গোলযোগপূর্ণ সেই নির্বাচনের মাঝপথে মনজুর ভোট বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বিফল হন। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন। তবে গণভবনে সাক্ষাৎকারে যাননি মনজুর।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেননি। স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে কেন— জানতে চাইলে মনজুর বলেন, ‘এলাকার মানুষে আমাকে চায়। আমার নির্বাচনি এলাকার অন্তত আটটি ওয়ার্ডে এখনো অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি আছে। আমার লক্ষ্য একটাই— শুধু জনগণের উন্নয়ন। আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের সঙ্গে জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে চাই।’