ঢাকা: শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেও সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে। শাহজালাল বিমানবন্দরের উল্টো পাশের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশের ১১ কিলোমিটারে চলছে যানবাহন।
ওপরে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুই-তিনটি গাড়ি ছাড়া কোনো গণপরিবহন এই উড়ালসড়কটি ব্যবহার করছে না। আর সিএনজি-মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি নেই নতুন খুলে দেওয়া এই উড়ালসড়কটিতে।
ফলে প্রথমদিনে এই রাস্তার যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি নগরবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত এই উড়ালসড়কটি। কোনো পরিবর্তনই হয়নি সেই চিরচেনা যানজটের।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই বিমানবন্দর, বনানী ও মহাখালী অংশে এক্সপ্রেসওয়ের নিচে তীব্র যানজট।
যদিও বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, এই প্রকল্প চালু হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকেরা। সকাল থেকে সেই প্রত্যাশিত চিত্রই দেখা গেছে।
এর বাইরে মহাখালী ও বনানী থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়েতে ওঠার দুইটি র্যাম্প বন্ধ থাকায় ওই অংশের গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ওপরে উঠে বিমানবন্দর বা ফার্মগেট অংশে চলাচল করতে পারছে না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর বিমানবন্দর সড়ক থেকে বনানী পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকবে। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, উল্টো আগের মতই রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে। সকাল ৮টা থেকেই বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে বনানী থেকে মহাখালী ও তেজগাঁও হয়ে মগবাজার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়।
দ্রুতগতির এই উড়ালসড়ক চালু হওয়া অংশে উঠা নামার জন্য মোট ১৫টি র্যাম্প আছে। এরমধ্যে, এয়ারপোর্ট এলাকায় দুইটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুইটি ও ফার্মগেটে একটি। আজ থেকে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
মহাখালীতে বাস টার্মিনাল পার হয়ে হাতের বাম পাশে দুইটি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে একটি নেমেছে ও একটি উঠে গেছে। এই অংশে আগে থেকেই টার্মিনাল কেন্দ্রিক গাড়িগুলো রাস্তা দখল করে রাখার জন্য যানজট লেগে থাকে।
এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার পর অনেক গাড়ি এখানে নামার র্যাম্প দেওয়ায় মহাখালীতে আসার ফলে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ তৈরি হয়েছে। একইভাবে বনানী ও ফার্মগেট অংশে র্যাম্প দিয়ে গাড়িগুলো নেমে আগে থেকে সৃষ্টি জটের মধ্যে এসে পড়ছে। আবার বনানীতে সড়ক ভবনের পাশেই একটি ওঠার র্যাম্প আছে। সেটিতে কাজ চলছে। যার কারণে ওই অংশের গাড়িগুলো ওপরে উঠতে পারছে না। এর কারণে মোটামুটি বনানী ও মহাখালীর এই রাস্তাতে আগের মতোই যানজট আছে।
যাত্রীরা দাবি করছেন, গণপরিবহন এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না, যার ফলে আগে যেমন ছিল তেমনই আছে। গণপরিবহন যদি এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে তবে তারা নিচের যাত্রী পাবে না, নিদিষ্ট স্থান থেকে উঠতে বা নামতে হবে। অন্যদিকে মোটরসাইকেল ও সিএনজি না চলার জন্য নিচের রাস্তায় আগেই মতোই একই পরিমাণ যানবাহন চলাচল করছে।
উত্তরা থেকে ফার্মগেটগামী যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তরার বাসা থেকে বের হয়েই দেখি রাস্তায় তীব্র যানজট। এক্সপ্রেসওয়ে চালুতে ভেবেছিলাম আজ হয়তো রাস্তায় যানজট কম থাকবে। পরে দেখি লোকাল বাস একটাও ওপরে ওঠে না।
গণপরিবহন ওপরে না উঠলে কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করে আরেক যাত্রী শাহেদুল ইসলাম বলেন, বাসগুলো ওপরে উঠলে যাত্রী পাবে না, এজন্য তারা ওপরে উঠছে না। ফলে গণপরিবহন ব্যবহার করা যাত্রীরা কোনো সুবিধা পাবে না।
এক্সপ্রেসওয়েতে যা চলছে
সকাল ছয়টায় এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার প্রথম তিন ঘণ্টায় উড়ালসড়কটি ব্যবহার করেছে দুই হাজার ১১৭টি গাড়ি। প্রথম দিনে এক্সপ্রেসওয়েটি রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কয়েকটি বাস দেখা গেছে উড়ালসড়কে। যার মধ্যে একটি বিআরটিসির যাত্রীবাহী বাস, আর দুটি সরকারি অফিস কর্মচারীদের বহনকারী বাস। এছাড়া বেশকিছু কাভার্ডভ্যানও উড়ালসড়কটি ব্যবহার করেছে।
এক্সপ্রেসওয়ের কর্মী নুর হোসেন বলেন, সকাল থেকে মাত্র ২-৩টি বাস উঠেছে। প্রায় সবগুলোই সরকারি বাস। অন্য বাস ওঠেনি। সিএনজি ও মোটরসাইকেল ওঠার চেষ্টা করছে। তবে আমরা তাদের নামিয়ে দিচ্ছি। তারা হয়তো জানে না, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনা কমাতে উড়ালপথটিতে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।