ঢাকা: রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৭ আগস্ট) এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৭ শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, আন্দোলরত অবস্থায় জীবন বিসর্জন দিতে দুই শিক্ষার্থী ‘লিকুইড পয়জন জাতীয় কিছু’ পান করেছেন।
অসুস্থ সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন।
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনে যোগ দেন ৭ কলেজের শিক্ষার্থী বদরুন্নেসা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সোনিয়া আক্তার (২৩), কবি নজরুল কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তৌকিবুর হাসান বাপ্পি (২৪), ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার মাহমুদ অপু (২৫), কবি নজরুলের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাদেক বাপ্পি (২৩), তিতুমীরের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহবুব প্লাবন (২২), বাংলা কলেজের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চতুর্থ ছাত্র রাজিব ইসলাম (২৩) ও ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইয়াসিন আলী সাগর (২৫)।
তাদের মধ্যে সোনিয়া ও শাহরিয়ার মাহমুদ অপুকে ভর্তি নিয়েছে হাসপাতাল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কবি নজরুল কলেজের ছাত্র তকিবুর রহমান বাপ্পি ও বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সোনিয়া আক্তার হ্যান্ড রাবিং সল্যুশন হেক্সিসল পান করেছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়াএসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নীলক্ষেত মোড়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত অবস্থায় কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। এক ছাত্রীসহ দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, দুজন ছাড়া হাসপাতালে আসা বাকি শিক্ষার্থীদের অবস্থা গুরুতর নয়।
হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইয়াসিন আলী সাগরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আন্দোলনরত অবস্থায় জীবন বিসর্জন দিতে কবি নজরুল কলেজের ছাত্র তকিবুর রহমান বাপ্পি লিকুইড পয়জন জাতীয় কিছু জিনিস খেয়ে ফেলে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে ফেলি। এছাড়া অন্য কেউ খেয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
এ সময় পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে শনিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের কয়েকটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সিজিপিএ’র শর্ত শিথিল করে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দেওয়ার এক দফা দাবিতে গণ-অনশন করার ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনশনের লক্ষ্যে ২৭ আগস্ট (রোববার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ১০টায় সবাই উপস্থিত হবেন। এরপর বেলা ১১টায় নীলক্ষেত অভিমুখে রওনা হবেন।
এতে আরও বলা হয়, ‘গর্জে ওঠো হে ছাত্র সমাজ, গর্জে ওঠো। আগামী ২৭ আগস্ট, রোববার হচ্ছে আমাদের মরা-বাঁচার লড়াই। ঢাবির এই অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দাবি মানতে হবে, নয়তো ৭ কলেজকে আলাদা করতে হবে। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের জীবন বিপন্ন হতে দেব না। সবাই ২৭ তারিখের জন্য প্রস্তুত হোন। এই আন্দোলন বৃহত্তর থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ নেবে।
অনেক অন্যায় সহ্য করেছি, অনেক আশ্বাস পেয়ে ফিরে এসেছি। আর না। হয় আমাদের দাবি মানবে, নয়তো আমাদের লাশ নিয়ে যাবে। এই আন্দোলনকে সফল করতে প্রয়োজন শুধু পুরো ৭ কলেজের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। দাবি আমাদের একটাই, এক দফা এক দাবি। দীর্ঘ নয় মাস পর ফল প্রকাশের কারণে, সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে মানোন্নয়নের মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দিতে হবে। ’
এর আগে গত বুধবার (২৩ আগস্ট) আন্দোলনের কথা থাকলেও শিক্ষকদের আশ্বাসে প্রাথমিকভাবে সেদিনের কর্মসূচি স্থগিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।