বরগুনার খরস্রোতা খাকদোন নদীর শাখা নদী ভারানী। স্থানীয়দের কাছে এটি ভারানী খাল নামেই বেশি পরিচিত। কয়েকমাস আগে বরগুনা পৌর শহর থেকে বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া পর্যন্ত খনন করা হয় নয় কিলোমিটার দৈর্ঘের এই ভাড়ানী খাল। কিন্তু সুবিধার বদলে ভারানী এখন শহর ও উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় ভাড়ানি খালটি পুনরুদ্ধারে পরিবেশবাদী বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্দোলন ও পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা উচ্চাদালতে দখলমুক্তে আইনী লড়াইয়ের পর খাল দখলমুক্ত ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে উচ্ছেদাভিযান শুরু করে। পাউবো কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটি খননের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে কার্যাদেশ পায়। বরাদ্দকৃত এই কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট এবং নিম্নস্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯ দশমিক ৩৬ ফুট এবং গভীরতা ১ দশমিক ৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬ দশমিক ৫০ ফুট।
২০২২ সালের ফেব্রয়ারী মাসে খালটি খননেনর কাজ শেষ হয়। তবে অপরিকল্পিত খননের ফলে খালটিতে এখন অবাধে জোয়ার- ভাটার প্রবাহ শুরু হওয়ায় মাত্র তিন মাসের মধ্যেই উভয় পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি ও জোয়ারে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে বরগুনা শহরের দুটি সেতু ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও খাল খননের ফলে পিলারের নিচের মাটির ভিত নড়বরে হয়ে গেছে। একই ভাবে স্রোতের তোড়ে মাটি ভেসে গিয়ে পৌর শহরের মাছ বাজার থেকে শুরু করে গুলবুনিয়া পর্যন্ত মোট ১১টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পূর্বপাশের শহীদ স্মৃতি সড়ক হয়ে গুলবুনিয়া পর্যন্ত ভাঙনে ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে খালের পাড়ের বেশকিছু স্থাপনা। এছাড়া খালের পশ্চিম পাড়ে বরগুনা-চালিতালী সড়কের পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়ক থেকে শুরু করে খাদ্যগুদাম, জেলা স্কুল ও বাঁশবুনিয়া এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের একাশং ভেঙে খালে পড়েছে। বরগুনা পৌরশহর সংলগ্ন বাঁশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট জুনাইদ জুয়েল বলেন, খালটি অপরিকল্পিত ভাবে খননের পর এখন ভাঙনের শিকার হচ্ছে সড়ক, স্থাপনা ও পারাপারের সেতু। অথচ খালটি খননের সময় মাছ বাজার থেকে বাঁশবুনিয়া পর্যন্ত সুরক্ষা ব্লক স্থাপন করা হলে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি উভয় পাড় সুরক্ষিত থাকত।
পাউবো চাইলে এখনো এ প্রকল্প হাতে নিতে পারে। বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানির হোসেন কামাল বলেন, জোয়ার ভাটার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে তরিঘরি করে অপরিকল্পিত ভাবে ভারানী খাল খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবিধার জন্য খনন করা হলেও এখন সেই খননই উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের বসতি সহ স্থাপনা, উভয় পাড়ের সড়ক ও ১১টি সেতুর জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। দ্রুত উভয় পাড়ে সুরক্ষা ব্লক স্থাপন না করলে সড়ক, সেতু ও পাড়ের বসতি সহ অনেক স্থাপনা খালের পেটে চলে যাবে। বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহবায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, অনেক আন্দোলনের পর খালটি দখলমুক্ত হয়েছে এবং খননের কাজও শেষ।
কিন্ত এখণ যে অবস্থা খাল কেটে কুমির আনা হয়েছে। উপকার অপেক্ষা এখন যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা থেকে সুরক্ষা দিতে পাউবোর ভূমিকা রাখতে হবে। দ্রুত খালের উভয় পাড়ে সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করে ব্লক স্থাপন না করলে হুমকীর মুখে পড়বে সড়ক, ব্রিজ ও এলাকার বাসিন্দাদের বসতি।
বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, পৌর শহরের দুটি ব্রিজ ঝুঁকিতে থাকায় বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করেছি। তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও পাউবোকে সব ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তত। পাউবো বরিশাল বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করা যায় না। বরগুনায় ৫টি প্রকল্প অনুমোদন চাওয়া হলেও ২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। খাকদন নদী ও ভাড়ানীখালের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করে অনুমোদন প্রস্তাব করা যেতে পারে।