রংপুরে যৌতুকের টাকা না আনায় গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন করে শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গৃহবধূ রেজোয়ানা দিল আফরোজ (২২) শুক্রবার রাতে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধুর পাষণ্ড স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এই ঘটনায় পাঁচজনকে আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়। আসামীরা হলেন নিহত গৃহবধূর পাষন্ড স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ ও তার স্বামী। শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাহিগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস।
পুলিশ ও নিহত গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানান, তিন বছর আগে রংপুরের মাহিগঞ্জের সরেয়ারতল এলাকার রেজাউলের মেয়ে রেজোয়ানা দিল আফরোজের আনুষ্ঠানিকভাবে একই এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রেজাউল করিমের সঙ্গে বিয়ে হয়। ওই সময় বরপক্ষকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে নিহত গৃহবধূর পরিবার। বিয়ের বছরখানেক জেতে না যেতেই আবারো রেজোয়ানা দিল আফরোজকে যৌতুকের কথা বলে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গৃহবধূ বাবার বাড়ি থেকে আগের দাবি কৃত যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানালে প্রায়ই মারধর মানসিক নির্যাতন করতো স্বামী শ্বশুর বাড়ির লোকজন। স্বামী সংসার করার নিয়তে গৃহবধূ তাদের শত অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে এরই মধ্যে গত ৫ জুন আবারো যৌতুকের জন্য স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধর করেন। ৮ জুন বিকেলে আসামিরা তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন নিহত গৃহবধূর পরিবার।
দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রেজোয়ানাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তার দেড় বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।মামলার বাদী ও নিহত গৃহবধূর বাবা রেজাউল অভিযোগ করে বলেন, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় তার মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে জামাই। শ্বশুর-শাশুড়ি আগুন নেভাতে না গিয়ে দরজা বন্ধ করে জানিয়ে দেয়, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে মাহিগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ঘটনার পর নিহত গৃহবধূর স্বামী, ননদ ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।