ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলুম-অন্যায়কে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না নাগেশ্বরীতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ পছন্দের বিয়ের বিপক্ষে অধিকাংশ পাকিস্তানি সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাহজালাল বিমানবন্দরে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ গ্রেফতার জেলা গোয়েন্দা শাখা, পাবনার অভিযানে ০৩(তিন) কেজি গাঁজা সহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনার মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি ,১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি । বেরোবিতে জুলাইয়ে বিপ্লবের বিরোধিতা কারী ক্যাম্পাসে দাপটে চলেন ক্ষমতার উৎস কোথায় মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটাস ঘিরে নানা ধরনের আলোচনা

ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় ডেইরি ফার্মের আড়ালে কাটা হচ্ছে পাহাড়

চট্টগ্রামের ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় আলতাফ হোসেনের বাড়ির পেছনে চলছে পাহাড় কাটার মহাউৎসব। দিনে দুপুরে প্রাকৃতিক সম্পদ পাহাড় কেটে কেটে একাকার করে দিচ্ছেন দুর্বৃত্ত কারীরা। আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে কাঁটা হচ্ছে এই পাহাড়। এলাকায় আলতাফ হোসেনের ব্যাপক দাপট রয়েছে যার কারণে এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,আলতাফ হোসেনের বাড়ির পেছনে জনতা ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার রয়েছে যে খামারটির পেছনে কাটা হচ্ছে অবাধে পাহাড়।
গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে প্রায় ১২০ এর উপরে পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন স্থানীয় ভূমিধসরা। বাকি যে পাহাড়গুলো রয়েছে সেগুলো কেটেও চট্টগ্রামের পাহাড়ের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিলীন করার কাজে লিপ্ত রয়েছেন তারা। এভাবে প্রতিনিয়ত ফৌজদারহাট জালালাবাদ বাইজিদ লিংক রোড পাহাড় কেটে উজার করছে পাহাড়খেকোরা। বারবার অভিযান পরিচালনা করেও পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ভাবে যেনো থামাতে পারছে পাহাড় কাটা। প্রতিনিয়ত পাহাড়খেকোরা পাহাড় সাবাড় করে দিচ্ছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের
নিয়ন্ত্রণে কাটা হয় এসব পাহাড় গুলো যার কারণে বেশির ভাগ সময়ে এদের কে আইনের আওতায় আনা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলে বিভিন্ন রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের
প্রভাব খাটিয়ে এরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ইতোপূর্বে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড়খেকোদের দমাতে পারেনি। অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়ে তারা গা ঢাকা দেয়। মামলাকে দুর্বৃত্তরা পাত্তা দেয় না বলে মন্তব্য করে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাহাড় কাটা নিয়ে একাধিক মামলা হলেও পাহাড়খেকোরা দমেনি এখনো তারা এখনও প্রতিনিয়ত দিনে দুপুর রাতে অন্ধকারে কাটছে পাহাড়।

একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালে নগরীর পাঁচটি থানা এলাকায় ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে ঠেকে। মাত্র বছর কয়েকের মধ্যে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কেটে ফেলা হয়। এটি মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় অসংখ্য পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে পাঁচলাইশ থানায়। এখানে প্রায় ৭৪ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়েছে। ত্রিশ বছর নগরীতে ১২০টির মতো পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। নগরীতে আগে ২০০টি পাহাড় ছিল। ইতোমধ্যে ১২০টি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ৮০টির মতো পাহাড় টিকে আছে। এখনো অনেক পাহাড় কাটা হচ্ছে।

সম্প্রতি সময়ে পাহাড়খেকোদের নিয়ন্ত্রণে পাহাড় কাটার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে বায়েজিদ বোস্তামী ও খুলশী জালালাবাদ এলাকায় চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটা হচ্ছে ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকা সহ জঙ্গল
সলিমপুর এলাকায়। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতা অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পুলিশের তৎপরতায় ছন্দপতন ঘটে। ইতোমধ্যে পুলিশ কাজে যোগ দিলেও ছন্দ পুরোপুরি ফিরে আসেনি। এতে করে পাহাড়খেকোরা হয়েছে বেপরোয়া। পরিবেশ অধিদপ্তরও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে রাতে–দিনে সমানতালে পাহাড় কাটা হচ্ছে নগরীতে।

এ বিষয়ে পরিবেশের একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন তবে অভিযোগ দায়ের করা হলে পরিদর্শন করে দ্রুত যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য কে নষ্ট করছে পাহাড়খেকোরা যা কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিযান পরিচালনা করলে কিছুদিন কাটাকাটি বন্ধ থাকে তবে আবারো সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পাহারখেকোরা পাহাড় কাটাতে লিপ্ত হচ্ছে। এ সকল পাহাড়খেকোদের হাত থেকে
পাহাড়কে সুরক্ষিত রাখা না গেলে একটা সময় চট্টগ্রাম হারাবে তার আপন সৌন্দর্যকে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলুম-অন্যায়কে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না

ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় ডেইরি ফার্মের আড়ালে কাটা হচ্ছে পাহাড়

আপডেট সময় ০১:৩২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় আলতাফ হোসেনের বাড়ির পেছনে চলছে পাহাড় কাটার মহাউৎসব। দিনে দুপুরে প্রাকৃতিক সম্পদ পাহাড় কেটে কেটে একাকার করে দিচ্ছেন দুর্বৃত্ত কারীরা। আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে কাঁটা হচ্ছে এই পাহাড়। এলাকায় আলতাফ হোসেনের ব্যাপক দাপট রয়েছে যার কারণে এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,আলতাফ হোসেনের বাড়ির পেছনে জনতা ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার রয়েছে যে খামারটির পেছনে কাটা হচ্ছে অবাধে পাহাড়।
গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে প্রায় ১২০ এর উপরে পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন স্থানীয় ভূমিধসরা। বাকি যে পাহাড়গুলো রয়েছে সেগুলো কেটেও চট্টগ্রামের পাহাড়ের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিলীন করার কাজে লিপ্ত রয়েছেন তারা। এভাবে প্রতিনিয়ত ফৌজদারহাট জালালাবাদ বাইজিদ লিংক রোড পাহাড় কেটে উজার করছে পাহাড়খেকোরা। বারবার অভিযান পরিচালনা করেও পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ভাবে যেনো থামাতে পারছে পাহাড় কাটা। প্রতিনিয়ত পাহাড়খেকোরা পাহাড় সাবাড় করে দিচ্ছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের
নিয়ন্ত্রণে কাটা হয় এসব পাহাড় গুলো যার কারণে বেশির ভাগ সময়ে এদের কে আইনের আওতায় আনা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলে বিভিন্ন রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের
প্রভাব খাটিয়ে এরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ইতোপূর্বে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড়খেকোদের দমাতে পারেনি। অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়ে তারা গা ঢাকা দেয়। মামলাকে দুর্বৃত্তরা পাত্তা দেয় না বলে মন্তব্য করে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাহাড় কাটা নিয়ে একাধিক মামলা হলেও পাহাড়খেকোরা দমেনি এখনো তারা এখনও প্রতিনিয়ত দিনে দুপুর রাতে অন্ধকারে কাটছে পাহাড়।

একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালে নগরীর পাঁচটি থানা এলাকায় ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে ঠেকে। মাত্র বছর কয়েকের মধ্যে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কেটে ফেলা হয়। এটি মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় অসংখ্য পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে পাঁচলাইশ থানায়। এখানে প্রায় ৭৪ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়েছে। ত্রিশ বছর নগরীতে ১২০টির মতো পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। নগরীতে আগে ২০০টি পাহাড় ছিল। ইতোমধ্যে ১২০টি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ৮০টির মতো পাহাড় টিকে আছে। এখনো অনেক পাহাড় কাটা হচ্ছে।

সম্প্রতি সময়ে পাহাড়খেকোদের নিয়ন্ত্রণে পাহাড় কাটার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে বায়েজিদ বোস্তামী ও খুলশী জালালাবাদ এলাকায় চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটা হচ্ছে ফয়‘স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকা সহ জঙ্গল
সলিমপুর এলাকায়। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতা অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পুলিশের তৎপরতায় ছন্দপতন ঘটে। ইতোমধ্যে পুলিশ কাজে যোগ দিলেও ছন্দ পুরোপুরি ফিরে আসেনি। এতে করে পাহাড়খেকোরা হয়েছে বেপরোয়া। পরিবেশ অধিদপ্তরও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে রাতে–দিনে সমানতালে পাহাড় কাটা হচ্ছে নগরীতে।

এ বিষয়ে পরিবেশের একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন তবে অভিযোগ দায়ের করা হলে পরিদর্শন করে দ্রুত যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য কে নষ্ট করছে পাহাড়খেকোরা যা কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিযান পরিচালনা করলে কিছুদিন কাটাকাটি বন্ধ থাকে তবে আবারো সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পাহারখেকোরা পাহাড় কাটাতে লিপ্ত হচ্ছে। এ সকল পাহাড়খেকোদের হাত থেকে
পাহাড়কে সুরক্ষিত রাখা না গেলে একটা সময় চট্টগ্রাম হারাবে তার আপন সৌন্দর্যকে।