ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাটোরে শিমুলের শাসন রাজ্যে সবাই ছিল অসহায়

দীর্ঘ ১৫ বছর দুঃশাসন হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ , রাহাজানি স্ট্যান্ডার্ড বাজি, চাকরি বাণিজ্য, সবকিছুতেই শিমুলের শাসন রাজ্যে অরাজকতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ২০১৪ সালে নাটোর-২ (সদর) আসন থেকে প্রথম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম শিমুল। এর পর থেকে নাটোর শহর ও আশেপাশের এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন শিমুল ও তাঁর লোকজন। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শিমুল গড়ে তোলেন অস্ত্রধারী বাহিনী। যাদের কাজই ছিল, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত থেকে ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ওপর দমন-নিপীড়নও সমানে চালাতে থাকে। এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও শিমুল বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের ঝাঁঞ্জা।

শিমুল সরকারি অফিস-আদালত শুরু করে, পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক ও ট্র্যাংক-লরি পরিবহন সমিতি দখল, জমি দখল, প্রাণ কোম্পানী দখল, রাস্তায় চাঁদাবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, সরকারি প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য, এহেন কোনো বড় কাজ নাই যা শিমুলের অগোচরে কোনো সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা করতে পেরেছেন। এক কথায় বলা যায়, শিমুল যেন নাটোর শহরকে তাঁর রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আর সেই রাজ্যে শিমুল ছাড়া বাকিরা সবাই ছিল অসহায়। এর প্রভাবে শিমুল কানাডার টরেন্টোতে আলিশান বাড়ি, নাটোর সদরে আলিশান বাড়িসহ ১০ বছরে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। শিমুলের সম্পদ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দম কমিশন (দুদক) টিম।

দলীয় সূত্র মতে, ২০১৪ সালে শিমুল এমপি হওয়ার পর পরই প্রথমে হামলা করেন সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলীর বাসায়। একই বছর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। নাটোর সদরে যখনোই বিএনপি-জামায়াত কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়েয়ে, তখনোই শিমুল বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলে পড়েছে হায়েনার মতো প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর। সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়িতে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর ছিলো শিমুল বাহিনীর কাছে ডাল-ভাত। নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, ‘সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে শিমুলের রাজনৈতিক উত্থান হয়। সে মূলত সন্ত্রাসী বলে এলাকায় পরিচিতি ছিল। সন্ত্রাসের কারণে কারণে ছাত্রলীগের নেতা হতে না পারলেও পরবর্তিতে সে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে। এরপর মূলত সে নাটোরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম শুরু করে। তার পুরস্কার স্বরুপ খুনি হাসিনা শিমুলকে এমপি বানায়ছিল।’

বিএনপি নেতা শাহিন বলেন, শিমুল এমপি হয়ে নাটোরের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। বরং নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। সন্ত্রাসের মাধ্যমে সবকিছু দখল করে, চাঁদাবাজি করে হাজার কোটির মালিক হয়েছে। তাঁর বাহিনীর হামলায় ১০ বছরে নাটোর সদরে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত নেতাকর্মী। শিমুল গোটা নাটোর সদরে ত্রাসের রাজত্ব করেছে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এমনকি তাদের দলীয় নেতাকর্মীরাও তার বিপক্ষে গিয়ে রেহায় পাননি।’

জেলা বিএনপির আহ্বায় শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সেও আমার ওপরে হামলা চালিয়েছে শিমুল বাহিনী। নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি প্রায় পঙ্গুত্ব জীবন-যাপন করছি। শিমুলের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে কেউ রেহায় পাইনি।’

আব্দুর রহিম নামের এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘রাস্তায় বাস-ট্রাক থেকে চাঁদা তোলাসহ নাটোরের প্রান কম্পানীর উচ্ছিষ্ট মালামাল, খৈল থেকে শুরু করে নানা মালামাল ছিল শিমুল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। প্রাণের খৈল শিমুল তার নিজের ইচ্ছায় বিক্রি করত। তার হুকুম ছাড়া বাইরের কেউ প্রাণের খৈল কিনতে পারত না।’

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরাও তো শিমুলের দ্বারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। গত ১০ বছরে শিমুল এবং তার লোকজনই নাটোরে যা বলেছে তাই হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছউ করতে পারেনি। তার পরেও এখন পলাতক থাকতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ করি বলে। যা লুটে নিয়েছে শিমুল ও তার বাহিনীর লোকজন। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের মতো বঞ্চিত নেতাদের।’

এদিকে, শিমুলের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচার করে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও মধ্যে গত ১৫ আগস্ট শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। এই স্ত্রীর নামেই নাটোর সদরে জান্নাতি প্যালেস গড়ে তোলেন শিমুল। যে বাড়ি নির্মাণ করতে তিনি বিদেশ থেকে আসবাবপত্র, মার্বেল, টাইলসসহ ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র কিনে আনেন বিতর্কিত সাবেক এ এমপি। ফলে তার এই বাড়ি নির্মাণেই অন্তত একশত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা করেন এলাকাবাসী। গত ৫ আগস্টে শিমুলের এই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। এর পর বাড়ি থেকে চারজনের পোড়া লাশও উদ্ধার করা হয়।

দলীয় সূত্র মতে, শিমুল সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে ২০১৮ দ্বিতীয় বার এমপি হয়ে। ওইবার সংসদ সদস্য হওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আবারও সেই শিমুলের হাতেই ধরিয়ে দেওয়া হয় নৌকার টিকিট। এর মাধ্যমে গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত শিমুল ও তার বাহিনী নাটোর শহরজুড়ে চালিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব। নাটোরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয় শিমুল বাহিনী বাস ও ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করত। একটি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় হত ২০০ টাকা করে। এর অধিকাংশই যেত শিমুলের পকেটে। এর বাইরে জমি, দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পের কমিশন আদায়সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে শিমুল অঢেল সম্পদের মালিক হন। অথচ একসময় তার তেমন কিছুই ছিল না। এখন নাটোর, ঢাকায় রয়েছে বাড়ি, নামে-বেনামে জমি, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দখল করেছিল শিমুল। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে জমানো অর্থ, সঞ্চয়পত্র, বিদেশে বাড়িসহ সবমিলিয়ে শিমুল ও তার পরিবারের সদস্যরা অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার মালিক বলেও দাবি করেছেন একাধিক সূত্র।
তবে এসব বিষয়ে জানতে শিমুলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোরে শিমুলের শাসন রাজ্যে সবাই ছিল অসহায়

আপডেট সময় ০৪:০৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

দীর্ঘ ১৫ বছর দুঃশাসন হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ , রাহাজানি স্ট্যান্ডার্ড বাজি, চাকরি বাণিজ্য, সবকিছুতেই শিমুলের শাসন রাজ্যে অরাজকতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ২০১৪ সালে নাটোর-২ (সদর) আসন থেকে প্রথম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম শিমুল। এর পর থেকে নাটোর শহর ও আশেপাশের এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন শিমুল ও তাঁর লোকজন। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শিমুল গড়ে তোলেন অস্ত্রধারী বাহিনী। যাদের কাজই ছিল, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত থেকে ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ওপর দমন-নিপীড়নও সমানে চালাতে থাকে। এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও শিমুল বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের ঝাঁঞ্জা।

শিমুল সরকারি অফিস-আদালত শুরু করে, পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক ও ট্র্যাংক-লরি পরিবহন সমিতি দখল, জমি দখল, প্রাণ কোম্পানী দখল, রাস্তায় চাঁদাবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, সরকারি প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য, এহেন কোনো বড় কাজ নাই যা শিমুলের অগোচরে কোনো সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা করতে পেরেছেন। এক কথায় বলা যায়, শিমুল যেন নাটোর শহরকে তাঁর রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আর সেই রাজ্যে শিমুল ছাড়া বাকিরা সবাই ছিল অসহায়। এর প্রভাবে শিমুল কানাডার টরেন্টোতে আলিশান বাড়ি, নাটোর সদরে আলিশান বাড়িসহ ১০ বছরে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। শিমুলের সম্পদ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দম কমিশন (দুদক) টিম।

দলীয় সূত্র মতে, ২০১৪ সালে শিমুল এমপি হওয়ার পর পরই প্রথমে হামলা করেন সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলীর বাসায়। একই বছর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। নাটোর সদরে যখনোই বিএনপি-জামায়াত কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়েয়ে, তখনোই শিমুল বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলে পড়েছে হায়েনার মতো প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর। সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়িতে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর ছিলো শিমুল বাহিনীর কাছে ডাল-ভাত। নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, ‘সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে শিমুলের রাজনৈতিক উত্থান হয়। সে মূলত সন্ত্রাসী বলে এলাকায় পরিচিতি ছিল। সন্ত্রাসের কারণে কারণে ছাত্রলীগের নেতা হতে না পারলেও পরবর্তিতে সে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে। এরপর মূলত সে নাটোরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম শুরু করে। তার পুরস্কার স্বরুপ খুনি হাসিনা শিমুলকে এমপি বানায়ছিল।’

বিএনপি নেতা শাহিন বলেন, শিমুল এমপি হয়ে নাটোরের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। বরং নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। সন্ত্রাসের মাধ্যমে সবকিছু দখল করে, চাঁদাবাজি করে হাজার কোটির মালিক হয়েছে। তাঁর বাহিনীর হামলায় ১০ বছরে নাটোর সদরে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত নেতাকর্মী। শিমুল গোটা নাটোর সদরে ত্রাসের রাজত্ব করেছে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এমনকি তাদের দলীয় নেতাকর্মীরাও তার বিপক্ষে গিয়ে রেহায় পাননি।’

জেলা বিএনপির আহ্বায় শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সেও আমার ওপরে হামলা চালিয়েছে শিমুল বাহিনী। নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি প্রায় পঙ্গুত্ব জীবন-যাপন করছি। শিমুলের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে কেউ রেহায় পাইনি।’

আব্দুর রহিম নামের এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘রাস্তায় বাস-ট্রাক থেকে চাঁদা তোলাসহ নাটোরের প্রান কম্পানীর উচ্ছিষ্ট মালামাল, খৈল থেকে শুরু করে নানা মালামাল ছিল শিমুল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। প্রাণের খৈল শিমুল তার নিজের ইচ্ছায় বিক্রি করত। তার হুকুম ছাড়া বাইরের কেউ প্রাণের খৈল কিনতে পারত না।’

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরাও তো শিমুলের দ্বারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। গত ১০ বছরে শিমুল এবং তার লোকজনই নাটোরে যা বলেছে তাই হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছউ করতে পারেনি। তার পরেও এখন পলাতক থাকতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ করি বলে। যা লুটে নিয়েছে শিমুল ও তার বাহিনীর লোকজন। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের মতো বঞ্চিত নেতাদের।’

এদিকে, শিমুলের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচার করে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও মধ্যে গত ১৫ আগস্ট শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। এই স্ত্রীর নামেই নাটোর সদরে জান্নাতি প্যালেস গড়ে তোলেন শিমুল। যে বাড়ি নির্মাণ করতে তিনি বিদেশ থেকে আসবাবপত্র, মার্বেল, টাইলসসহ ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র কিনে আনেন বিতর্কিত সাবেক এ এমপি। ফলে তার এই বাড়ি নির্মাণেই অন্তত একশত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা করেন এলাকাবাসী। গত ৫ আগস্টে শিমুলের এই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। এর পর বাড়ি থেকে চারজনের পোড়া লাশও উদ্ধার করা হয়।

দলীয় সূত্র মতে, শিমুল সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে ২০১৮ দ্বিতীয় বার এমপি হয়ে। ওইবার সংসদ সদস্য হওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আবারও সেই শিমুলের হাতেই ধরিয়ে দেওয়া হয় নৌকার টিকিট। এর মাধ্যমে গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত শিমুল ও তার বাহিনী নাটোর শহরজুড়ে চালিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব। নাটোরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয় শিমুল বাহিনী বাস ও ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করত। একটি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় হত ২০০ টাকা করে। এর অধিকাংশই যেত শিমুলের পকেটে। এর বাইরে জমি, দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পের কমিশন আদায়সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে শিমুল অঢেল সম্পদের মালিক হন। অথচ একসময় তার তেমন কিছুই ছিল না। এখন নাটোর, ঢাকায় রয়েছে বাড়ি, নামে-বেনামে জমি, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দখল করেছিল শিমুল। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে জমানো অর্থ, সঞ্চয়পত্র, বিদেশে বাড়িসহ সবমিলিয়ে শিমুল ও তার পরিবারের সদস্যরা অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার মালিক বলেও দাবি করেছেন একাধিক সূত্র।
তবে এসব বিষয়ে জানতে শিমুলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।